যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিশেষ বার্তা!

গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার দাবি পিয়ংইয়ংয়ের

এটি ভূমিভিত্তিক বা 'ব্যালিস্টিক' ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা হতে পারে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার সুযোগ নেই : উত্তর কোরিয়া

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন -ফাইল ছবি
যাযাদি ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনার পথ পিয়ংইয়ং বন্ধ করে দিয়েছে বলে যখন মনে করা হচ্ছে, তখনই নিজেদের এক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে একটি 'খুব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা' সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এই পরীক্ষার ফল উত্তর কোরিয়ার কৌশলগত মর্যাদা আরও বাড়াতে ব্যবহার করা হবে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা 'কেসিএনএ' রোববার জানিয়েছে। কিন্তু তারা বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি স্যাটেলাইট লঞ্চারকে শক্তিশালী করার জন্য কোনো ইঞ্জিনের ভূমিভিত্তিক পরীক্ষা, অথবা 'ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইলের' পরীক্ষা হতে পারে। তবে যেটাই হোক না কেন, এর মাধ্যমে তারা যে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বিশেষ বার্তা দিতে চেয়েছে, এটি স্পষ্ট। এই পরীক্ষা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে চলতি বছরের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য নিষেধাজ্ঞা ছাড়সহ নতুন একটি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি করতে বলেছিল পিয়ংইয়ং, অন্যথায় 'নতুন পথ' ধরবে বলে জানিয়েছিল। অপরদিকে, পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করা যাবে, এমন আশা প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার কূটনীতিকে ২০১৮ সালে তার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এজেন্ডার কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোর একটিতে পরিণত করেছিলেন। এরপর উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের সঙ্গে দুটি শীর্ষ বৈঠক ও এমনকি উত্তর কোরিয়ায় পা রাখা সত্ত্বেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে উলেস্নখযোগ্য কোনো ছাড় পেতে ব্যর্থ হন। নিজেদের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে উত্তর কোরিয়া। এরপরও চলতি বছরের প্রথম দিক থেকে ফের স্বল্পপালস্নার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় তারা। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের আছে বলে মন্তব্য করেন। এর পাল্টায় এক বছরের বেশি সময় পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফের আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেওয়া শুরু করে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়ার পর তাকে উদ্দেশ্য করে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ট্রাম্প যদি মুখোমুখি হতে চান, তাহলে একে 'ভীমরতিগ্রস্ত বুড়ো'র ?পুনরায় অধঃপতিত হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা উচিত। পরমাণু আলোচনার সুযোগ নেই : পিয়ংইয়ং এদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত কিম সং শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় বসার দরকার নেই আমাদের, আর পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ এরই মধ্যে আলোচনার টেবিলের বাইরে চলে গেছে।' তবে এদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এখনো একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আশা করছেন। গত বছর পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ এবং আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না চালানোর ঘোষণা দেন কিম। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় একটি পারমাণবিক স্থাপনাও। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে ভিয়েতনামে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমের বৈঠক কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা প্রশ্নে অসম্মতির প্রেক্ষাপটে গত ফেব্রম্নয়ারিতে কিম এবং ট্রাম্পের মধ্যকার হ্যানয় সম্মেলন ভেস্তে যাওয়ার পর এ আলোচনা প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে পিয়ংইয়ং তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিত্যাগে আগ্রহী। চলতি বছরের শেষ নাগাদ নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওয়াশিংটনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে পিয়ংইয়ং। তবে একই সঙ্গে তারা একের পর এক তাদের বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কিম সং বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে টেকসই সংলাপের প্রস্তাব আসলে প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার একটি কৌশল ছিল। এতে করে তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেছে।' গত মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, সামনের বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের জুন থেকে ট্রাম্প ও কিম তিনবার বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ফল আসেনি। বরং একাধিকবার বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন দুই নেতা। গত জুলাইয়ের শেষদিকে প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় পিয়ংইয়ং। চলতি বছরে এটি দেশটির ১২তম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা।