যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনা

পুরনো যুগ ফেরার শঙ্কায় নারীরা

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কাতারে শান্তি সম্মেলন -ফাইল ছবি
যাযাদি ডেস্ক আবারও শুরু হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তি আলোচনা। আলোচনায় এবারও নারীদের অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রম্নতি থাকছে তালেবান প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে। কিন্তু কঠোর অনুশাসনে বিশ্বাসী তালেবানে আস্থা নেই নারীদের। তাই তাদের প্রতিশ্রম্নতির পরও সেই হাড় হিম করা পুরনো যুগই আবার ফিরে আশার আশঙ্কায় রয়েছে আফগান নারীরা। নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর সেইসব দিনের আলামত এখনো ফুরিয়ে যায়নি। আফগানিস্তানের বিপজ্জনক প্রদেশ কান্দাহারের প্রথম এবং একমাত্র নারী আইনজীবী জয়নব ফয়েজের কথাই ধরা যাক। একের পর এক হুমকির মুখে কান্দাহার থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন জয়নব। পুরুষদেরকে কারাগারে পাঠানোর কারণে তালেবানের কাছ থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন তিনি। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই আইনজীবী জয়নব ফয়েজ আফগান নারীদের বড় রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। স্ত্রী বা বাগদত্তাকে মারধর ও নিপীড়নের অভিযোগে ২১ জন পুরুষকে কারাগারে পাঠিয়েছেন তিনি। দেশটির দক্ষিণের প্রত্যন্ত অঞ্চল কান্দাহারে তালেবান জঙ্গিরা অত্যন্ত সক্রিয়। কান্দাহারে মেয়েদের শিক্ষার ?অধিকারই যেখানে হুমকির মুখে, সেখানে একজন নারী আইনজীবী নারীদের হয়ে আদালতে লড়াই করে পুরুষদের কারাগারে পাঠাচ্ছেন। তালেবানের ঘাঁটি কান্দাহার তা মেনে নেবে কেন? তাই একের পর এক হুমকি পেতে থাকেন জয়নব। একদিন তার গাড়ির সামনে কাচে (উইন্ডশিল্ড) কেউ গুলি দিয়ে মোড়ানো একটি হাতে লেখা চিঠি রেখে যায়। চিঠিতে লেখা ছিল, 'এখন থেকে আপনিই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা আপনার সঙ্গে অন্যান্য পশ্চিমা দাসদের মতো আচরণ করব।' চিঠিতে 'ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তান' (আফগানিস্তানের সাবেক নাম) স্বাক্ষর করা ছিল। দেশটির তালেবান জঙ্গিরা এখনো এ নাম ব্যবহার করে। এই হুমকি উপেক্ষা করতে না পেরেই কান্দাহার ছেড়ে পালান জয়নব। আইনজীবী জয়নব এখন রাজধানী কাবুলে এক আত্মীয়র বাসায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকছেন। তিনি বলেন, গুলি ও হুমকি দেওয়া চিঠির আগে কখনো এতটা ভয় পাইনি।' যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালে অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে উৎখাত করে। তারপর থেকেই দেশটিতে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান আলোচনা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে কাতারের 'দোহা সম্মেলনে' আফগানিস্তানে রক্তক্ষয়ের অবসান ঘটানোসহ নারীদের সুরক্ষায়ও প্রতিশ্রম্নতি দেয় আফগান-তালেবান। কিন্তু তালেবানের প্রতিশ্রম্নতিতে বিশ্বাস করে না আফগান নারীরা। তালেবান শাসনে তারা আর যেতেও চায় না। ফিরতে চায় না কথায় কথায় ফতোয়া, দোররা আর নির্বাসনের শিকার হওয়ার সেই দিনগুলোতে। ১৯৯০ সালে গহর প্রদেশে যখন জয়নবের জন্ম, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ তখন ছিল তুঙ্গে। তালেবান শাসনের শুরুর দিকে বেড়ে উঠেছেন জয়নব। যখন মেয়েদের শিক্ষা বা চাকরির অধিকার ছিল না। নিষেধ অমান্যকারীদের পাথর ছুড়ে হত্যা করা হতো। তালেবান সরকার উৎখাত হওয়ার পর কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে লেখাপড়া করেন জয়নব। পরে পাস করে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গত বছর আফগান সরকার জয়নবকে দেশের সেরা পাঁচ সাহসী নারীর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কান্দাহার উপকণ্ঠে বিলবোর্ডে তার একটি ছবি দিয়ে লেখা হয়, 'নারীদের অধিকার রক্ষার নায়ক'। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিপীড়িত নারীদের এগিয়ে আসা। তাকে দেখে ভরসা পাওয়া অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হওয়া নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। জয়নব বলেন, 'আমার মামলাগুলোর খবর প্রকাশের পর নারীদের মধ্যে আইনের ওপর বিশ্বাস বাড়তে থাকে। কিন্তু এরপরই শুরু হয় হুমকি আসা। ই-মেইল মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, মোবাইল মেসেজ, ভয়েসমেইল কিছুই বাদ ছিল না। সব মাধ্যমেই একের পর এক হুমকি আসতে শুরু করে।' সাহসী জয়নব ওইসব হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু গত ফেব্রম্নয়ারিতে তার সহকর্মী আজম আহমেদকে বন্দুকধারীরা অফিসে যাওয়ার পথে গুলি করে হত্যা করে। এতে ভেঙে পড়েন তিনি। জয়নব বলেন, 'একজন তালেবান তালেবানই হয়। ?ওরা প্রমাণ করেছে, তারা ঠিক কী ধরনের মানুষ এবং তাদের আদর্শ কী? যদি ওই আদর্শ নিয়ে তারা আবারও ক্ষমতায় আসে, তবে আবার সব আগের মতোই হয়ে যাবে।' সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস