রোহিঙ্গা গণহত্যা

মিয়ানমারকে বয়কটের ডাক ৩০ মানবাধিকার সংস্থার

গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানি আজ থেকে শুরু

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অং সান সু চির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ -ফাইল ছবি
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বৈশ্বিকভাবে মিয়ানমারকে বয়কটের ডাক দিয়ে এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্বের ১০ দেশের ৩০টি মানবাধিকার সংস্থা। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানি শুরুর একদিন আগে সোমবার বৈশ্বিক এই বয়কটের ডাক দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আজ থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স রোহিঙ্গা মানবাধিকার সংগঠন 'দ্য ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন' এক বিবৃতিতে বিশ্বের ১০টি দেশের ৩০টি মানবাধিকার সংস্থা একযোগে মিয়ানমারকে বয়কটের এই কর্মসূচি শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। বিবৃতিতে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশি বিনিয়োগকারী, পেশাদার এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে 'ফরসি ডট কো', 'রেস্টলেস বিংস', 'ডেস্টিনেশন জাস্টিস', 'রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক অব কানাডা', 'রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ অব ইনডিয়া' ও 'এশিয়া সেন্টার'র মতো সংগঠনগুলো। জার্মানিভিত্তিক 'ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন'র সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং 'গেস্নাবাল বয়কট মুভমেন্ট'র অন্যতম উদ্যোক্তা নে সাং লুইন বিবৃতিতে বলেন, 'জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান মিশন পরিষ্কারভাবে উলেস্নখ করেছে, জন্ম ও নাগরিকত্বের দিক আমার পূর্বপুরুষের দেশ আমাদের রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠীকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে...।' লুইন বলেন, 'রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি নাগরিক বা ক্রেতা, অধিকার সংগঠনের সদস্য বা প্রতিনিধি, ধর্মীয় সম্প্রদায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা পেশাজীবী বা সংসদীয় অ্যাসোসিয়েশনসহ সবাইকে নিজেদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে মিয়ানমারের সঙ্গে সব প্রাতিষ্ঠানিক বা আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছি।' জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান মিশনকে উদ্ধৃত করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবাধিকার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ 'র?্যাপোর্টিয়ার' ইয়াং লি সংখ্যালঘু শান, কাচিন, তাং, কারেন, রাখাইন ও চিন সম্প্রদায়ের ওপর একই ধরনের সামরিক দমন পীড়নের প্রমাণ পেয়েছেন। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'গেস্নাবাল বয়কট মুভমেন্ট' শুরু হয়েছে একটি অনলাইন পিটিশন অভিযানের মাধ্যমে; যেখানে নরওয়ের নোবেল কমিটিকে অং সাং সুচির নোবেল পুরস্কার বাতিলের আহবান জানানো হয়েছে। কারণ তারা মনে করে মিয়ানমারের বেসামরিক এই নেতা এখন আর এই পুরস্কারের যোগ্য নন। ১৯৯০ এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে 'ফ্রি বার্মা' আন্দোলনের সূচনাকারী মিয়ামনারের মানবাধিকার কর্মী ড. মং জারনি বলেন, 'মান্দালয়ের একটি সামরিক পরিবার থেকে আসা আমি একজন বার্মিজ এবং বুদ্ধিস্ট। আমি পরিষ্কারভাবে এই বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইনকে সমর্থন করছি। আমার জন্মভূমির অবস্থা এখন ১৯৩০ সালের নাৎসি জার্মানির মতো। শুধু সেনাবাহিনীই শুধু হাজার হাজার রোহিঙ্গার দিকে ট্রিগার চেপেই গণহত্যার অপরাধ করেনি বরং অনেক সাধারণ মানুষও রোহিঙ্গাদের একই দৃষ্টিতে দেখছে।' ড. মং জারনিই প্রথম ২০১৩ সালে তার দেশের এই ভয়াবহ অপরাধের বিষয়টি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে এনেছিলেন বলে বিবৃতিতে উলেস্নখ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয় বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন ছাড়াও রয়েছে ফরসিয়া কো, রেস্টলেস বিইংস, ডেসটিনেশন জাস্টিস, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক অফ ক্যানাডা, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ অফ ইন্ডিয়া ও এশিয়া সেন্টার। দ্য ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন বলছে, এই বয়কটের উদ্দেশ্য মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং সামরিক বাহিনী নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের ওপর অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা। এই মামলায় মিয়ানমারের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য রোববার দ্য হেগে পৌঁছেছেন দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা অং সান সু চি। মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে গত নভেম্বরে গাম্বিয়ার দায়ের করা এই মামলার শুনানি আজ (মঙ্গলবার) শুরু হয়ে চলবে তিনদিন। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গণহত্যার অভিযোগ এনে গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া। অং সান সু চির কার্যালয় আমস্টারডামের চিফল বিমানবন্দরে তার পৌঁছানোর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে। এতে দেখা যায়, নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। পরে সেখান থেকে হেগের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের একাধিক প্রবাসী গোষ্ঠী হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার মামলার শুনানি চলাকালে বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছে। মিয়ানমার সরকারের সমর্থনেও সেখানে সমাবেশের পরিকল্পনা করছে মিয়ানমারের নাগরিকরা।