নাগরিকত্ব আইন

জ্বলছে ভারত, ভ্রমণে সতর্কতা আরোপ চার দেশের

পর্যটকদের নিরাপদে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার এ পদক্ষেপ কাশ্মীরের পর এবার 'অফলাইনে' আসাম ও মেঘালয়

প্রকাশ | ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত। এ আগুনের লেলিহান শিখা দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার ব্যাঙ্গালুরুতে আসামের সাধারণ শিক্ষার্থীরা 'নো ক্যাব', 'নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল চাই না' লেখা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভ করে -পিটিআই/আউটলুক ইনডিয়া
ভারতের নতুন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (ক্যাব) প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুরের একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তবে কারফিউ উপেক্ষা করেই রাজপথে বিক্ষোভে নেমে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী। এমন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ভারতের এই রাজ্যগুলোতে বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, দ্য ওয়াল গত বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পরেই আইনে পরিণত হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল। তারপর থেকেই সহিংসতা বেড়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে। প্রতিবাদের আগুনে বেশি জ্বলছে আসাম ও ত্রিপুরা। এই পরিস্থিতিতে এসব অঞ্চলে ভ্রমণের সময় গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হতে পারে যেকোনো সময়। তাই আপাতত স্পর্শকাতর অঞ্চলগুলোতে পা না রাখার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাজ্যের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, 'নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে বিক্ষোভ হচ্ছে। দেশটির উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে আসাম ও ত্রিপুরায় বিক্ষোভ বড় আকার নিয়েছে। গুয়াহাটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে ও আসামের ১০ জেলায় মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। তাই এই এলাকায় বেড়াতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন পর্যটকরা।' নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, 'কারো যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনো কারণে সেখানে যেতেই হয়, তাহলে যেন তারা এই নির্দেশিকায় জানানো সব বিষয় মাথায় রাখেন এবং যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, তা মেনে চলেন। এছাড়া সবাই যেন সবসময় ব্রিটিশ পর্যটন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।' যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তাতেও প্রায় একই কথা লেখা রয়েছে। তবে তারা আসামে এই মুহূর্তে কাউকে বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এছাড়া কানাডা এবং ফ্রান্সও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভ্রমণে নাগরিকদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই অশান্ত পরিবেশ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও। আগামী সপ্তাহে গুয়াহাটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্মেলন স্থগিত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও দাবি করেছে, দেশ থেকে মুসলমান নাগরিকদের সরাতে ভারতের এই নতুন নাগরিকত্ব আইন যথেষ্ট 'বৈষম্যমূলক'। কাশ্মীরের পর এবার 'অফলাইনে' আসাম ও মেঘালয় কাশ্মীরের পর এবার আসাম ও মেঘালয়ে রাজ্যেও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সদ্য পাস হওয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ চলছে দেশটির ওই দুই রাজ্যে। চলমান বিক্ষোভের মুখে শুক্রবার ওই দুই রাজ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে রাখার খবরটি জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট 'টেকক্রাঞ্চ'। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতেই ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও উলেস্নখ করেছে সাইটটি। এ বিষয়ে আসামের কর্মকর্তারা বলেছেন, 'ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোর সাহায্যে গুজব এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এমন তথ্য, ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হতে পারে।' ওই দুই রাজ্যের মানুষ আবার কবে নাগাদ ইন্টারনেট সংযোগ আবার ফিরে পেতে পারেন, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে টেকক্রাঞ্চ মন্তব্য করেছে, 'পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে, খবর ও তথ্য পেতে সহযোগিতা করে, এমন একটি মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার নজির অনেক দেশেই দেখা গেছে, তবে ভারত সবার চেয়ে এগিয়ে।' এর আগে ভারতশাসিত কাশ্মীরে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল দেশটি। চার মাস পর এখনো ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে রয়েছেন দেশটির ওই অঞ্চলের অধিবাসীরা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইন্টারনেট বাজার হিসেবে পরিচিত ভারতে বর্তমানে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬৫ কোটির বেশি। এভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রাখার বিষয়ে অতীতে নিন্দা জানিয়েছিল জাতিসংঘ। বিষয়টিকে 'মানবাধিকার লঙ্ঘন' হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিল সংস্থাটি। উলেস্নখ্য, ১০ ডিসেম্বর ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয় ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রস্তাব। পরে তা উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হয়। প্রতিবেশী দেশ থেকে গিয়ে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই আইনে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সংশোধনে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে এতে বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে মুসলমানদের।