নাগরিকত্ব আইন

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ভারত

ম আসামে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ ম পশ্চিমবঙ্গও তপ্ত, ফের রেল স্টেশনে আগুন, ৬ জেলায় বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের আঁচ কেবল দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গেই লাগেনি, তার প্রভাব পড়েছে খোদ রাজধানী দিলিস্নতেও। তারই ধারাবাহিকতায় এই আইনের প্রতিবাদে রোববার সন্ধ্যায় দিলিস্নতে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় -ওয়ান ইনডিয়া
যাযাদি ডেস্ক ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় পঞ্চম দিনের মতো টানা বিক্ষোভ করেছে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। শুধু আসামেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, বিক্ষোভকারীদের আগুনে রোববার পর্যন্ত অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বিক্ষোভ-সহিংসতায় বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গের ছয় জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন। তবে আসামের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। অনেক জায়গায় কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। সংবাদসূত্র: এএফপি, এবিপি নিউজ, আল-জাজিরা, দ্য হিন্দু, ইনডিয়া টুডে রোববার আসামের স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে চারজন ও দোকানে বিক্ষোভকারীদের আগুনে একজন এবং বিক্ষোভের সময় গণপিটুনিতে একজনের প্রাণহানির ঘটনার পর আসামের বৃহত্তম শহর গুয়াহাটিতে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববারও গুয়াহাটিতে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সামনে শত শত পুলিশ সদস্যকে নীরব থাকতে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন ধরনের স্স্নোগান দেয়। অনেকের হাতে 'আসাম দীর্ঘজীবী হোক', 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চাই না' লেখা ব্যানার দেখা যায়। আসামের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর কড়াকড়ি কিছুটা রাজ্যের তেল এবং গ্যাস উৎপাদনে কারফিউয়ের ধাক্কা লেগেছে। তবে অনেকেই দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়। পরদিন রাষ্ট্রপতি এই বিলে স্বাক্ষর করলে সেটি আইনে পরিণত হয়। এই আইনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যেসব অমুসলমান শরণার্থীরা ভারতে গেছেন, তারা দেশটির নাগরিকত্ব পাবেন। তবে মুসলমান শরণার্থীদের ব্যাপারে আইনে কিছুই বলা হয়নি। এদিকে বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গেও তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছে রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। এই আইনের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে তোপ দেগে রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত থাকায় রোববার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভকারীরা টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেছেন। রেলস্টেশন, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভের আগুন জ্বলতে থাকা পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে ট্রেন সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে এই রাজ্যে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়া অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবে, এমন আশঙ্কায় সেখানে বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নামার ঘোষণা দিলেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় রাজ্য সরকার রোববার এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বারবার অনুরোধ ও নির্দেশনা (মমতা এর আগে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান) সত্ত্বেও 'কিছু বহিরাগত গোষ্ঠী শক্তি বিক্ষোভে অনুপ্রবেশ করে সহিংসতার উসকানি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্ররোচিত করার মাধ্যমে রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে।' বিবৃতিতে উলিস্নখিত যুক্তি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বলছে, পরিস্থিতি এমন রূপ ধারণ করার পরিপ্র্রেক্ষিতে সরকারের হাতে অন্য কোনো উপায় না থাকায় ছয় জেলা ও মহকুমায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলমানকে একঘরে করতে নতুন এই আইনের বাস্তবায়ন করছে বলে মুসলমান মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা দাবি করেছেন। তবে নরেন্দ্র মোদি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশটির একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং একটি মুসলমান রাজনৈতিক দল নতুন এই নাগরিক আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। তাদের যুক্তি, নতুন নাগরিকত্ব আইন সংবিধান এবং ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। এদিকে রাজ্যসভায় এই আইন পাসে সমর্থন দিয়েছিল আসামে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনৈতিক জোটসঙ্গী আসাম গণপরিষদ। কিন্তু রোববার আসাম গণপরিষদের নেতারা বলেছেন, তারা সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে এই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।