বাজপেয়ী ছিলেন সুবক্তা ও আবেগমথিত কবি

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অটলবিহারি বাজপেয়ী
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ীর প্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গে দেশটির রাজনীতি থেকে চিরপ্রস্থান ঘটল এক ভভ্র ব্যক্তিত্বের। সুবক্তা ও আবেগমথিত কবি হিসেবেও যিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। দেশটির তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। ১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে জন্ম অটলবিহারি বাজপেয়ীর। কিশোর বয়সে ১৯৪২-১৯৪৫ সালের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। ব্রিটিশ সরকারবিরোধী ওই আন্দোলনে যোগদানের ফলে তাকে কারাদÐ ভোগ করতে হয়। রাজনৈতিক জীবনের গোড়ায় কমিউনিস্ট মতবাদের প্রতি আগ্রহী হলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) এবং জন সঙ্ঘের কাজকমের্র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বাজপেয়ী গোয়ালিয়রের সরস্বতী শিশু মন্দির থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরে গোয়ালিয়রের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েন। হিন্দি, ইংরেজি এবং সংস্কৃতে ডিস্টিংশন নিয়ে পাস করেন তিনি। এরপর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন কানপুরের ডিএভি কলেজ থেকে। আইন পড়ার সময় আরএসএস-এর পত্রিকা প্রকাশের কাজে সম্পূণর্ নিয়োজিত হওয়ার জন্য তিনি ল’ স্কুলে পড়াশোনার পাঠ মাঝপথেই ছেড়ে দেন। পরবতীর্ সময় সঙ্ঘের নীতি অতিক্রম করে ক্রমে ভারতীয় জনতা পাটির্র (বিজেপি) মধ্যপন্থি কণ্ঠস্বর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। কমর্জীবনে ভারতীয় জন সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সংস্পশের্ আসেন অটলবিহারী। কাশ্মিরে প্রবেশের জন্য ভারতীয়দের পারমিট ব্যবস্থার অবসান, ওই রাজ্যে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ এবং মুসলমান অধ্যুষিত রাজ্য হিসেবে কাশ্মিরকে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে ১৯৫৩ সালে শ্যামাপ্রসাদ আমরণ অনশন আন্দোলন শুরু করেন। মূলত ওই আন্দোলনের ফলেই কাশ্মিরে ভারতীয় পযর্টকদের জন্য আবশ্যিক পরিচয়পত্র ব্যবস্থা রদ করা হয় এবং ভারত প্রজাতন্ত্রে জম্মু ও কাশ্মির অন্তভুির্ক্তর পথ প্রশস্ত হয়। ওই অস্থির সময় শ্যামাপ্রসাদের পাশে ছিলেন তরুণ শিষ্য অটলবিহারি। অটলবিহারিই প্রথম অ-কংগ্রেসি নেতা, যার সরকার পঁাচ বছরের মেয়াদ পূণর্ করতে সফল হয়। লাগাতার চার দশক লোকসভায় বিরোধী আসনে বসার পর ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। তবে প্রথম দফায় মাত্র ১৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। আস্থা ভোটে যথেষ্ট সংখ্যক আসন সংগ্রহে ব্যথর্ হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হয় তার সরকার। ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান অটলবিহারি বাজপেয়ী। কিন্তু সেবারও ১৩ মাস পর জোট শরিক জয়ললিতার এআইএডিএমকে সমথর্ন তুলে নেয়ার ফলে মেয়াদ ফুরায় তার শাসনকালের। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুননির্র্বাির্চত হন অটলবিহারি বাজপেয়ী। জোট শক্তিশালী হওয়ার ফলে পঁাচ বছরের শাসনকাল সম্পূণর্ করতে তিনি সফল হন। ভারতীয় রাজনীতির দুনিয়ায় সুবক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন অটলবিহারি। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তার হিন্দি বক্তৃতা চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান সফরের সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের ভেতরই বহু সমালোচনার শিকার হন বাজপেয়ী। কিন্তু সব বিতকের্ক পেছনে ঠেলে তিনি বাসে করে লাহোর যান। পরবতীর্ সময় তার এই পদক্ষেপ অনুসরণ করেন উত্তরসূরি মনমোহন সিং। সংবাদসূত্র : ইনডিয়া টাইমস