বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
৩৩ চুক্তি স্বাক্ষর

চীনা প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক সফর কোণঠাসা মিয়ানমারে

১৯ বছরের মধ্যে কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর বেইজিংয়ের গেস্নাবাল বেল্ট ও রোড উদ্যোগের অংশ
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সখ্য বহু পুরনো হলেও সবার আশা ছিল রোহিঙ্গা ইসু্যতে চাপে থাকা সু চির দেশের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখবে চীন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো চিত্র। চীনা প্রেসিডেন্ট বড় বিনিয়োগের থলে নিয়ে দেশটি সফর করলেন। যা বিশ্ববাসীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ানোরই শামিল। শনিবার নেইপিডোর প্রেসিডেন্ট ভবনে বৈঠকে শি জিনপিং ও অং সান সু চি -এএফপি অনলাইন

রোহিঙ্গা গণহত্যায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেই 'কোণঠাসা' মিয়ানমারে দু'দিনের সফর করেছেন দেশটির গুরুত্বপূর্ণ মিত্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শনিবার সফরের শেষদিনে উভয় দেশ অবকাঠামোগত প্রকল্প গতিশীল করতে ৩৩টি চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফরে নতুন কোনো প্রকল্প স্বাক্ষর না হলেও সফরকে 'ঐতিহাসিক' আখ্যা দিয়েছে দুই দেশই। সংবাদসূত্র : সিনহুয়া, সিজিটিএন, রয়টার্স

চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফরকে চীনের গেস্নাবাল বেল্ট ও রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বড় বিনিয়োগের থলে নিয়ে শুক্রবার সকালে মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিডোতে পৌঁছান শি জিনপিং। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম সফর এটি। আর ১৯ বছরের মধ্যে কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের প্রথম সফর।

শুক্রবার স্বাগত অনুষ্ঠানে দুই দেশ সম্পর্কের 'নতুন যুগে' প্রবেশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জিনপিং। তিনি বলেন, 'আমরা একটি ভবিষ্যৎ রোডম্যাপ আঁকছি, যেটি ভাই-বোনের মতো কাছাকাছি সম্পর্ককে প্রাণ দেবে এবং যার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একসঙ্গে কষ্টকে অতিক্রম ও পরস্পরকে সহযোগিতা করা।' জবাবে সু চি বলেন, চীন হচ্ছে 'একটি মহান দেশ, যেটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।'

দুই নেতাই শত কোটি ডলার মূল্যের চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর দ্রম্নত বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছেন। তাদের স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে রয়েছে চীন থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, সহিংসতা কবলিত রাখাইনে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, সীমান্তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে একটি নতুন শহরের প্রকল্প।

তবে শি জিনপিংয়ের সফরে ৩.৬ বিলিয়ন ডলারের বিতর্কিত বাঁধ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। ২০১১ সাল থেকেই প্রকল্পটির কাজ থেমে আছে। পুরনো মিত্র চীনের সঙ্গে মিয়ানমার নতুন কোনো প্রকল্পের স্বাক্ষর না হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বেইজিংয়ের বিনিয়োগের ব্যাপারে মিয়ানমার বরাবরই সতর্ক। এ ছাড়া আগামী বছর দেশটির জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই সু চি সরকার নির্বাচনের আগে বড় ধরনের চুক্তির ঝুঁকি নিতে চাইছে না।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপের ইয়াঙ্গুনভিত্তিক বিশ্লেষক রিচার্ড হর্সে বলেন, বিভিন্ন সমঝোতার চুক্তি স্বাক্ষর হলেও নতুন বড় কিছু নেই। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে সামনে নির্বাচন থাকায় চীনা বিনিয়োগের বিষয়ে মিয়ানমার সতর্কতা অবলম্বন করছে।

অন্যদিকে, এই সফর নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় ছিল ভারত। পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের মতো করে রাখাইনকে নিজেদের 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' প্রকল্পে যুক্ত করছে বেইজিং। দিলিস্নর আশঙ্কা, রাখাইনে কিয়াউকফিউ বন্দরের মাধ্যমে বেইজিং বঙ্গোপসাগরকে ও তার মাধ্যমে সরাসরি ভারত মহাসাগরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

উলেস্নখ্য, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের মুখে সাত লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেন, অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাখাইনে মিয়ানমারের গণহত্যার অভিযোগ এনে দেশটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) দাঁড় করিয়েছে গাম্বিয়া। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক চাপে রয়েছে মিয়ানমার। সেই মুহূর্তে শি জিনপিংয়ের এই সফর দেশটির পাশে চীনের দাঁড়ানোরই শামিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84973 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1