পরিস্থিতি বিপজ্জনক

করোনাভাইরাসে মহামারির শঙ্কা চীনে

প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৫৬ আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার দ্রম্নতগতিতে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ চীনা প্রেসিডেন্টের আক্রান্ত দেশের সংখ্যা বাড়ছে

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। রোববার পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬ জনে; আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় দুই হাজার। তবে স্থানীয় এক চিকিৎসাকর্মী দাবি করেছেন, সরকার মিথ্যা বলছে এবং চীনে প্রায় এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে, সংক্রমণের ক্ষমতা আরও প্রবল হচ্ছে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সংবাদসূত্র : সিনহুয়া, রয়টার্স, বিবিসি দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন মন্ত্রী মা জিয়াওয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'নতুন এই ভাইরাসের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ধারণা সীমিত এবং এই ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত ঝুঁকি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণাও নেই।' তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার এক থেকে ১৪ দিন পর এর প্রথম লক্ষণ প্রকাশ হতে পারে। ইনকিউবেশনের সময় এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে; যা এর আগে একই ধরনের আরেক প্রাণঘাতী ভাইরাস 'সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে' (সার্স) দেখা যেতো না।' ২০০২ থেকে ২০০৩ সালের দিকে চীনে সার্স ভাইরাসের ব্যাপক প্রকোপ দেখা দেয়। এতে অন্তত ৭৭৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন আট হাজারের বেশি মানুষ। দেশটিতে নতুন চান্দ্রবর্ষের দ্বিতীয় দিন রোববার জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী মা জিয়াওয়ে বলেন, ভাইরাস সংক্রমণের লাগাম টানতে এখন পর্যন্ত পরিবহন ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি বড় ধরনের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। তবে এই প্রচেষ্টা আরও জোরাল করা হবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শনিবার দেশটির জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই ভাইরাস দ্রম্নতগতিতে ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তার দেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানের এই ভাইরাস এখনো মহামারি আকার ধারণ না করলেও এরই মধ্যে থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপালে পৌঁছে গেছে। এমনকি ইউরোপেও ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফ্রান্সে অন্তত তিনজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে সন্দেহ করছে ইসরাইলও। এছাড়া, ভাইরাস ধরা পড়া দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে কানাডাও। শনিবার দেশটিতে এই ভাইরাস আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনা নাগরিকদের কারও সঙ্গে করমর্দন না করে ঐতিহ্য অনুসারে হাতজোড় করে সম্মান প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে এ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রবল শক্তিতে ছড়িয়ে পড়ায় চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের বন্ধ কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালুর যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল; তা বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। রোববার দেশটির সরকারি রেডিও স্টেশন 'চায়না ন্যাশনাল রেডিও' (সিএনআর) চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এ তথ্য জানিয়েছে। সিএনআর বলছে, উহানের করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চীনা নতুন চান্দ্রবর্ষ উপলক্ষে সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পৃথক এক বার্তায় বেইজিং সরকার বলছে, এই পদক্ষেপের ফলে শহরে অচলাবস্থা তৈরি হবে না। করোনাভাইরাস বিস্তারের আশঙ্কায় উহানের বাসিন্দাদের অন্য কোথাও যাওয়া বা শহরে কাউকে আসতে দেওয়াও হচ্ছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে উহানে। সেখানে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসা নিতে পারবেন। করোনাভাইরাসের উৎস উহানে এরই মধ্যে সামরিক বাহিনীর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাঠানো হয়েছে। এদিকে, উহানে আটকে পড়া মার্কিন কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিতে বিশেষ বিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। উলেস্নখ্য, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও শুষ্ক কাশি হতে পারে। এর সপ্তাহখানেক পর শ্বাসকষ্টও দেখা দেয়। অনেক সময় নিউমোনিয়াও হতে পারে। তবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ কী বা আদৌ তা বোঝা যায় কি-না, তা এখনো অজানা। তবে নতুন এই করোনাভাইরাস যথেষ্ট বিপজ্জনক।