করোনাভাইরাস নিয়ে বিজ্ঞানীরা আগেই সতর্ক করেছিলেন

১৮ মাসের মধ্যে ছয় কোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে, বলেছিলেন তারা এ ভাইরাস হবে যেকোনো ভ্যাকসিন প্রতিরোধী

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতের বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'জন হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি'র বিজ্ঞানী এরিক টনার চীনের উহান শহরে রহস্যজনক করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবরে হতবাক হননি। কারণ তিন মাস আগে টনারের নেতৃত্বে একদল মার্কিন গবেষক বিশ্বজুড়ে এ ধরনের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, এএফপি সে সময় তারা বলেছিলেন, নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের প্রভাবে ১৮ মাসের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং নিউমোনিয়ার মতো অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। ২০০৩ সালের দিকে চীনে আরেক প্রাণঘাতী ভাইরাস 'সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম'র (সার্স) সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। টনার বলেন, 'আমি অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা করছিলাম, একটি নতুন ধরনের করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।' চীনের উহানের এই ভাইরাস এখনো মহামারি আকার ধারণ না করলেও থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, নেপালে এরই মধ্যে পৌঁছেছে। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক দেশেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে তারা ধারণা করেছিলেন। বিজ্ঞানী টনার বলেন, 'আমরা এখনো জানি না এই ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর। আমরা জানি, এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু কি পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, তা আমরা জানি না। প্রাথমিকভাবে এটা বোঝা যাচ্ছে, এই ভাইরাস সার্সের চেয়ে একটু দুর্বল। আর এটাই স্বস্তির বিষয়। তবে সার্সের চেয়ে এটি দ্রম্নতগতিতে বিস্তার লাভ করতে পারে।' মার্কিন স্বাস্থ্যখাতের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে নতুন ধরনের একটি করোনাভাইরাস কীভাবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তার একটি কাল্পনিক চিত্র উপস্থাপনা করেছিলেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটসের সহায়তায় এই গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা। কাল্পনিক এই গবেষণায় ব্রাজিলের শূকরের খামার থেকে যদি একটি করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে কী ঘটবে সেটি জানার চেষ্টা করেন তারা। চীনের উহানের করোনাভাইরাস সেখানকার একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে। জন হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, নতুন করোনাভাইরাস হবে আধুনিক যেকোনো ভ্যাকসিন প্রতিরোধী। এটা হবে সার্সের চেয়েও ভয়াবহ প্রাণঘাতী। কল্পিত এই মহামারি শুরু হবে দক্ষিণ আমেরিকার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে। এই ভাইরাসে আক্রান্তরা ফ্লু অথবা নিউমোনিয়ায় ভুগতে পারেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। তারা আরও বলেছিলেন, এ সময় দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ভ্রমণ বাতিল হয়ে যাবে ৪৫ শতাংশ। মানুষ প্রচুর ভুয়া সংবাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে। ছয় মাস পর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে এই ভাইরাস। এর এক বছরের মধ্যে বিশ্বে সাড়ে ছয় কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। টনার বলেন, 'আমরা যে বিশ্বে বসবাস করছি, এটি তারই একটি অংশ। আমরা এখন মহামারির যুগে বসবাস করছি।'