চীনে করোনাভাইরাস

প্রাদুর্ভাব রোধে নববর্ষের ছুটি বাড়ল

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ৯ বিলিয়ন ডলার তহবিল হংকংয়ে রোগীদের নির্ধারিত ভবনে আগুন

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ঁযাযাদি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে চীন। তারপরও প্রতিদিন এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ভাইরাসটি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ায় লোকজন এখন কার্যত ঘরবন্দি। খুব প্রয়োজন না পড়লে ভয়ে বাইরে বেরোচ্ছে না। মানুষ কতখানি যে আতঙ্কগ্রস্ত, তা ওপরের ছবিতেই স্পষ্ট। ছবিটি সোমবার তোলা হয়েছে করোনাভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে -রয়টার্স অনলাইন
চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চান্দ্র নববর্ষের ছুটি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অথবা কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলেছে সরকার। সোমবার দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮১ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস যাতে আরও ছড়াতে না পারে, সেজন্য প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ও ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং নতুন করোনাভাইরাসের উৎসস্থল বলে বিবেচিত মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ হুবেইয়ের রাজধানী উহান পরিদর্শন করেছেন। প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে উহান পরিদর্শনে যাওয়া সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা লি। নীল রঙের সুরক্ষা পোশাকে আবৃত ও মুখে মাস্ক পরা লি সেখানে প্রাদুর্ভাব রোধে নেওয়া পদক্ষেপের খোঁজখবর নেন এবং রোগী ও চিকিৎসা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ৭৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে সোমবার নিশ্চিত করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেক হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। ফ্লু-জাতীয় এই ভাইরাসটির সংক্রমণে হুবেইতে ৭৬ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মৃত বাকি পাঁচ জন চীনের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের এক বাসিন্দা রয়েছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃতু্যর কথা সোমবার নিশ্চিত করেছে প্রদেশটির কর্তৃপক্ষ। এদিকে, চীন সরকার চান্দ্র নববর্ষের সপ্তাহব্যাপী ছুটি আরও তিন দিন বাড়িয়ে ২ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত করেছে। নববর্ষের এই ছুটিতে চীনজুড়ে উৎসব ও ভ্রমণের ধুম পড়ে যায়। কোটি কোটি লোক ভ্রমণে বের হলেও এবার ভাইরাসের আতঙ্কে তাদের অনেকেই পরিকল্পনা বাতিল করে ঘরে বসে আছেন। সরকারও বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান বাতিল, সীমিত করে এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। বিমান চলাচল, ট্রেন ও অন্যান্য গণপরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে উহান কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছে। চীনের অন্য কয়েকটি শহরেও চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস এরই মধ্যে রাজধানী বেইজিংসহ ২৯টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কানাডাসহ অন্তত ১২টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। বিশ্বের ১০টির বেশি দেশে কিছু সংখ্যক লোকের আক্রান্ত হওয়ার কথা জানা গেলেও চীনের বাইরে কারও মৃতু্য হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। ওই সব দেশের আক্রান্তরা সবাই উহান ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেছিলেন। নতুন এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে চীন শাসিত হংকং আট জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে। বিগত ১৪ দিনের মধ্যে যারা হুবেই গিয়েছেন তাদের হংকং প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে নগরটির স্থানীয় সরকার। তবে হংকংয়ের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। উলেস্নখ্য, ২০০২-০৩ সালে সার্স (সেভার একিউট রেসপাইরেটরি সিনড্রোম) সংক্রমণও বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করে। ওই ভাইরাসটিও চীন থেকে উদ্ভব হয়। এতে চীন ছাড়াও বেশ কয়েকটি দেশের শত শত মানুষ মারা যায়। হংকংয়ে করোনাভাইরাস রোগীদের নির্ধারিত ভবনে আগুন এদিকে, হংকংয়ে একদল বিক্ষোভকারী নতুন গড়ে তোলা একটি আবাসিক ভবনে আগুন দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস আক্রান্তদের পৃথক করে রাখার স্থাপনা হিসেবে এ ভবনটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল। রোববার রয়টার্সের এক সাংবাদিক কালো পোশাক এবং মুখোশ পরা কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে চীন সীমান্তের কাছে ফ্যানলিং এলাকার ওই পাবলিক হাউসিং বস্নকে দৌড়ে গিয়ে একটি ককটেইল জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। এরপরই ভবন থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায় এবং ফায়ার অ্যালার্ম বাজতে শোনা যায়। ভবনের জানালাগুলোও ভেঙে গেছে। দমকলকর্মীরা পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়েছেন। আগুনে ভবনের প্রবেশপথের অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে গেছে শত শত দাঙ্গা পুলিশ এবং এ ঘটনায় অন্তত একজন আটক হয়েছে। রোববার হংকংয়ের শত শত নাগরিক ওই ভবন অভিমুখী রাস্তা ইট ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে আটকিয়ে রেখে বিক্ষোভ করেছে। ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নাগরিকরা একটি আবাসিক এলাকার কাছের ওই ভবনকে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের রাখার স্থান হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়ার বিরোধিতা করছে।