ভুতুড়ে শহরে পরিণত উহান চীনে করোনাভাইরাস

ফাঁকা উহান শহরের রাস্তায় এক ডাক্তার ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে অবরুদ্ধ চীনের কয়েকটি শহর সুস্থ হলেন ৪৯ জন, ব্যবহৃত হচ্ছে এইডসের ওষুধ

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে ভাইরাসটি উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহরের গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্তত ১৬টি দেশে। এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মাস্ক পরার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। আর তাই ভিড় বাড়ছে মাস্কের দোকানগুলোতে। সোমবার হংকংয়ের একটি ফার্মেসির সামনে ব্যাপক ভিড় -এপি/আউটলুক ইনডিয়া
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আক্রান্তের হারও বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে লোকজন অঞ্চলটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ভুতুরে শহরে পরিণত হয়েছে উহান। চীনা কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন এই ভাইরাসে ১০৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন মোট চার হাজার ৫১৫ জন, আগের দিনও যে সংখ্যা দুই হাজার ৮৩৫ জন ছিল। সংবাদসূত্র : সিনহুয়া, বিবিসি করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উহানসহ হুবেই প্রদেশের কয়েকটি শহর কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে গণপরিবহন। নববর্ষের ছুটি দু'দিন বাড়িয়ে অনেক সরকারি দপ্তরের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। ২০০২ সালে সার্স এবং ২০১২ সালের মার্সের মতোই একই গোষ্ঠীর সদস্য এই নভেল করোনাভাইরাস; যা ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে। বছরের এমন এক সময় চীনে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, যখন চান্দ্রবর্ষের (লুনার) উৎসবে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করে। ফলে ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কাও বেড়ে গেছে অনেক। ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে হুবেই প্রদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের বাস চলাচল একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে চীন সরকার। হুবেই থেকে যারা বেইজিং বা সাংহাইতে যাচ্ছেন, তাদের ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। যে ১০৬ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চীনা কর্মকর্তারা, তাদের মধ্যে ১০০ জনেরই মৃতু্য হয়েছে হুবেই প্রদেশে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৭১৪ জন। আর যে শহর থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, সেই উহান পরিণত হয়েছে প্রায় ভুতুড়ে শহরে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল সেখানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কয়েকটি সুপারশপ ছাড়া অধিকাংশ দোকানপাটও বন্ধ। খুব জরুরি কিছু না ঘটলে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। নববর্ষের ছুটির মধ্যে দোকান বন্ধ থাকায় অনেকের ঘরে তৈরি হয়েছে খাবারের সংকট। সিটি মেয়র অবশ্য জানিয়েছেন, এক কোটি ১০ লাখ মানুষের এ শহরের বাসিন্দার একটি বড় অংশ ছুটি কাটাতে উহান ছেড়েছেন অবরুদ্ধ দশা শুরু হওয়ার আগেই। আরও কয়েকটি বড় শহরে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি ও রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রয়েছে। সাংহাই ও হংকংয়ে ডিজনিল্যান্ডও আপাতত বন্ধ। তিব্বতে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস চীনের বাইরেও অন্তত ১৬টি দেশে পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত পাঁচজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর চীন ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আরও অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া চীনে না যেতে পরামর্শ দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনের বাইরে বিভিন্ন দেশে অন্তত ৪৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পেরেছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডে আটজন; যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে পাঁচজন করে; মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে চার, ফ্রান্সে তিন, ভিয়েতনামে দু'জন এবং নেপাল, কানাডা, শ্রীলংকা, জার্মানি ও কম্বোডিয়ায় একজন করে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে চীনের বাইরে এ ভাইরাসে কারও মৃতু্যর তথ্য এখন পর্যন্ত আসেনি। উলেস্নখ্য, এ ভাইরাসের লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথা, গলা ও শরীরে ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। সাধারণ ফ্লুর মতোই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে এ রোগের ভাইরাস। করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। সুস্থ হলেন ৪৯ জন, ব্যবহৃত হচ্ছে এইডসের ওষুধ এদিকে, ভয়াবহ করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিলেও এই ভাইরাসে আক্রান্তরা অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। চীনে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৯ জন। চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে এর ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছে। দেশটির 'সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (সিডিসি) জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন তৈরির জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।অন্যদিকে, দেশটির সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হুয়ান শহরের একাধিক হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এইচআইভি-এইডসের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ছাড়াও বেইজিং ইউয়ান হাসপাতাল এবং 'মেডিক্যাভল সেন্টার অব পিএলএ' হাসপাতালে করোনা রোগীদের এইডসের ভ্যাকসিন 'লোপিনাভির' ও 'রিটোনাভির' দেওয়া হচ্ছে।