জীবাণু অস্ত্রের গবেষণাগার থেকে ছড়িয়েছে ভাইরাস!

দাবি ইসরাইলি বিশেষজ্ঞের তবে ইসরাইলি গবেষকের দাবি ওড়ালেন আরেক অণুজীব বিজ্ঞানী ড. রিচার্ড এর আগে কোনো ধরনের জীবাণু অস্ত্র থাকার কথা অস্বীকার করেছে চীন

প্রকাশ | ২৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের জীবাণু
চীনের উহান শহরের গোপন জীবাণু যুদ্ধাস্ত্র গবেষণাগার থেকেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছেন ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সাবেক এক বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা। প্রাণঘাতী চীনা করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে উহানের গোপন ওই জীবাণু গবেষণাগারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন তিনি। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক 'ওয়াশিংটন টাইমস' ইসরাইলি ওই সামরিক সাবেক কর্মকর্তার দাবির চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে চীনের অত্যাধুনিক ভাইরাস গবেষণা পরীক্ষাগার 'উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজি' নিয়ে ২০১৫ সালে স্থানীয় টেলিভিশনের করা একটা প্রতিবেদন চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত 'রেডিও ফ্রি এশিয়া' পুনরায় সম্প্রচারও করেছে। উহানের এ পরীক্ষাগারটিই প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে সক্ষম চীনের ঘোষিত একমাত্র স্থাপনা। ভাইরাস গবেষণার এই ইন্সটিটিউটটি বেইজিংয়ের গোপন জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি করেছেন ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জীবাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ড্যানি সোহাম। তিনি বলেন, 'ইন্সটিটিউটটির কিছু পরীক্ষাগার চীনের জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির গবেষণা ও আধুনিকায়নে যুক্ত থাকতে পারে, অন্ততপক্ষে পরোক্ষ সংযোগ থাকতে পারে; তবে হ্যাঁ, এটি চীনের জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির মূল স্থাপনা নয়।' চীন এর আগে তাদের কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক জীবাণু অস্ত্র থাকার কথা অস্বীকার করেছে। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের গত বছরের প্রতিবেদনে চীন গোপনে জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি চালাচ্ছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। মার্কিন গণমাধ্যম সোহামের বক্তব্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চীনা দূতাবাসের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলেও তার জবাব মেলেনি। হুবেই প্রদেশে কয়েক হাজার লোককে আক্রান্ত করা ও কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন, নিউমোনিয়া সদৃশ এ করোনাভাইরাসটির উৎপত্তি নিয়ে চীন এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। প্রাথমিকভাবে এটি উহানের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়েছে, গত সপ্তাহে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমকে দেশটির 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন'র পরিচালক গাও ফু এমন ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার শুরুর দিকে এ করোনাভাইরাসটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জীবাণু অস্ত্র ষড়যন্ত্রের অংশ বলে চীনের ইন্টারনেট (অন্তর্জাল) অঙ্গনে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। বেইজিং উহানের সামরিক বা বেসামরিক গবেষণা পরীক্ষাগার থেকে 'ছড়িয়ে পড়া' ভাইরাসটির সংক্রমণের বিষয়টি চাপা দিতে 'পাল্টা প্রচার' চালাতে এটি করে থাকতে পারে বলে অনুমান ওই কর্মকর্তার। নতুন এ ভাইরাসের জীবাণুকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও) নভেল করোনাভাইরাস ২০১৯-সিওভি নাম দিয়েছে। গত সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা নতুন এ করোনাভাইরাসটি চীনে 'জরুরি অবস্থা' সৃষ্টি করেছে বলে জানালেও এখনই বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। নিউমোনিয়াসদৃশ এ ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে চলতি সপ্তাহে চীন উহানে সেনাবাহিনী মোতায়েনে বাধ্য হয়েছে। এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার শহরটির সঙ্গে সব ধরনের পরিবহন যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। উহানের এ ভাইরোলজি ইন্সটিটিউটটি এর আগেও করোনাভাইরাস পরিবারের বেশ কয়েকটি সদস্যকে নিয়ে গবেষণা করেছে; যার মধ্যে সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপারেটরি সিনড্রোমের (সার্স) সৃষ্টি করা ভাইরাস, এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, জাপানিজ এনসেফালাইটিস ও ডেঙ্গু। রাশিয়ায় উদ্ভূত জৈব এজেন্ট অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু নিয়েও এরা কাজ করেছে বলে গণমাধ্যম জানিয়েছে। সোহাম বলেন, 'করোনাভাইরাস, বিশেষ করে সার্সের ভাইরাস নিয়ে ওই ইন্সটিটিউটে গবেষণা হয়েছে, এবং সম্ভবত এখনো সেখানে এ ভাইরাসটি আছে। ব্যাপক অর্থে সার্সও চীনের জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচিরই অংশ, বেশ কিছু গবেষণাগারে এটি নিয়ে কাজ হয়েছে।' উহানের এই ইন্সটিটিউটটির করোনাভাইরাস নিয়ে কাজের পুরোটাই চীনের জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচিরই অংশ কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বলতে না পারলেও, এমনটা হতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ইসরাইলের এ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সামরিক-বেসামরিক গবেষণার অংশ হিসেবে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে জীবাণু অস্ত্রের ওপর সেখানে কাজ পরিচালিত হয়। চীনের এই ইন্সটিটিউট থেকেই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লিকেজ হয়ে কিংবা ভেতরেই অজান্তে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে তা বাইরে চলে আসতে পারে। উহান ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির ক্ষেত্রেও এটি ঘটতে পারে, যদিও এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনোকিছুর প্রমাণ বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।' নতুন এ করোনাভাইরাসটির জিন বিশ্লেষণের পর এর উদ্ভব বা উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কিংবা ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইসরাইলের বার ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগিন-সাদাত সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে যুক্ত সোহাম জানান, চীনের ঘোষিত একমাত্র এ ভাইরোলজি ইন্সটিটিউটটির নিরাপত্তা মাত্রা প্যাথোজেন লেভেল ৪। অর্থাৎ, এখান থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ যেন না ছড়ায়, সেজন্য কঠোর নিরাপত্তা সুরক্ষার প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। তিনি বলেন, 'উহানের এ ইন্সটিটিউটটি চীনের বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির নিয়ন্ত্রণাধীন। যদিও এর কিছু পরীক্ষাগারের সঙ্গে চীনা প্রতিরক্ষা বাহিনীর জীবাণু অস্ত্র সংক্রান্ত কর্মসূচির যোগসাজশ থাকতে পারে।' ওয়াশিংটন টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সোহাম উহানের ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিকাল প্রোডাক্টসের কথাও বলেছেন। ১৯৯৩ সালে চীন তাদের এ স্থাপনার কথা ঘোষণা করে। ১৯৮৫ সালে জীবাণু অস্ত্র কনভেনশনে (বিডবিস্নউসি) যোগ দেওয়ার পর চীন এ সংক্রান্ত যে ৮টি গবেষণাগার বানিয়েছিল, উহানের এ ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিকাল প্রোডাক্টস তার একটি। এটি বেসামরিক স্থাপনা হলেও এর সঙ্গে চীনের সামরিক সংস্থাগুলোর যোগাযোগ আছে, এবং এটিও দেশটির জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে সন্দেহ সোহামের। সার্স ভাইরাসের প্রতিষেধকও এই ইন্সটিটিউট থেকে হয়েছে বলে মনে করা হয়। সোহাম উহানের দুটি ইন্সটিটিউটকে নতুন করোনাভাইরাসের উদ্ভবের জন্য সন্দেহ করলেও রুটজারস বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানী ড. রিচার্ড এব্রাইট তা উড়িয়ে দিয়েছেন। লন্ডনভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণের সঙ্গে পরীক্ষাগারগুলোর যোগসূত্র নিয়ে যে গুঞ্জন দেখা যাচ্ছে, তার কোনো ভিত্তিই নেই।' এই অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, 'জীবাণু অস্ত্র কর্মসূচি সামরিক-বেসামরিক গবেষণার অংশ হিসেবে পরিচালিত হয় এবং অবশ্যই অত্যন্ত গোপনে।' সংবাদসূত্র : ওয়াশিংটন টাইমস