চীনে করোনাভাইরাস

বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়া শুরু

জ্জ যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও ইইউর দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সরাচ্ছে জ্জ 'শয়তান' করোনাকে হার মানাবে চীন : জিনপিং

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাপানি নাগরিকরা চীনের উহান শহর ছাড়ছেন -এএফপি
প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। বুধবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিনহুয়া আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চীন থেকে প্রায় ২০০ জাপানি নাগরিক বিমানে করে এরই মধ্যে টোকিও পৌঁছেছেন। জাপানি গণমাধ্যম বলছে, চীন ফেরত নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন। তবে উপসর্গ দেখা না দিলেও তাদের সবাইকেই হাসপাতালে নিয়ে বিশেষ ওয়ার্ডে রেখে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলোর ফল না আসা পর্যন্ত তাদের বাড়ি থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া চীন থেকে ফেরানো ৬০০ নাগরিককে মূল ভূখন্ডে নেওয়ার আগে সতর্কতা হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্য ক্রিসমাস আইল্যান্ডে রাখতে চায়; যা মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। কারণ, দ্বীপটি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ, এমনকি সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক হাজার মানুষের জন্য তৈরি হলেও ওই শিবিরটিতে বর্তমানে চার সদস্যের একটি শ্রীলংকান পরিবার রয়েছে। চীন থেকে নিজেদের ৫৩ নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছে নিউজিল্যান্ড। জাপানের ২০০ নাগরিক উহান থেকে ফিরলেও সেখানে দেশটির আরও ৬৫০ নাগরিক রয়েছেন, যারা দেশে ফিরতে চান। এসব মানুষকে ফিরিয়ে নিতে আরও কয়েকটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে জাপান সরকার। এদিকে, বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কিছু সাধারণ নাগরিকও উহান ছেড়ে গেছেন। দেশে ফিরলেও তাদের অন্তত দুই সপ্তাহ বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে বিশেষ ব্যবস্থায় থাকতে হবে। যুক্তরাজ্যও তাদের অন্তত ২০০ নাগরিককে ফেরানোর ব্যবস্থা করছে। যদিও কিছু ব্রিটিশ নাগরিকের অভিযোগ, তাদের দেশে ফেরাতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, পৃথক দুটি বিমান ইউরোপের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে, এরই মধ্যে প্রথম ফ্লাইটে ২৫০ জন ফরাসি নাগরিক চীন ছাড়বেন। চলতি সপ্তাহেই চারটি ফ্লাইটে নিজেদের ৭০০ নাগরিককে ফিরিয়ে নেবে দক্ষিণ কোরিয়া। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, করোনাভাইরাস আক্রান্ত নাগরিকদের চিকিৎসার সব খরচই সরকার বহন করবে। গত ৩১ ডিসেম্বর উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর থেকে পালস্না দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। বুধবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৬৫ জনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে '২০১৯ নভেল করোনাভাইরাস'। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, চীন সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। 'শয়তান' করোনাভাইরাসকে হার মানাবে চীন : জিনপিং এদিকে, শতাধিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া নতুন নিউমোনিয়া সদৃশ করোনাভাইরাসকে 'শয়তান' আখ্যা দিয়ে এ ভাইরাস মোকাবেলার লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গ্যাব্রেইসেসুর সঙ্গে এক বৈঠকে শি বলেন, 'নতুন করোনাভাইরাস একটি শয়তান। আমরা এ শয়তানকে গুপ্তঘাতক হয়ে থাকতে দিতে পারি না।' প্রেসিডেন্ট জিনপিং আরও বলেন, 'চীন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবে এবং ভাইরাস প্রতিরোধ কর্মসূচিতে ডাবিস্নউএইচও'র অংশগ্রহণকে স্বাগত জানাবে। এর বিরুদ্ধে (করোনাভাইরাস) যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পূর্ণ আত্মবিশ্বাস এবং সক্ষমতা চীনের রয়েছে।' করোনভাইরাস তৈরি করলেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা অন্যদিকে, গবেষণাগারে সাফল্যজনকভাবে নভেল করোনাভাইরাসের একটি প্রতিলিপি তৈরি করেছেন বলে অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছে। চীনের বাইরে এই প্রথম ভাইরাসটি তৈরি করা হলো, যাকে 'উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি' বলে বর্ণনা করেছেন তারা। এর মাধ্যমে দ্রম্নত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটির টিকা তৈরি করা যাবে বলে আশা করছেন তারা। মেলবোর্নের 'পিটার ডোহার্টি ইন্সটিটিউট ফর ইনফেকশন অ্যান্ড ইমিউনিটি'র ওই গবেষকরা বুধবার জানিয়েছেন, রোগাক্রান্ত এক রোগীর শরীর থেকে সংগ্রহ করা নমুনা থেকে ভাইরাসটি উৎপাদন করা হয়েছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও) এবং বিশ্বের অন্যান্য গবেষণাগারগুলোর সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন তারা। নমুনাটি গত শুক্রবার তাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল।