ভারতের কেরালায় শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যা

আবারও ‘মেঘভাঙা’ বৃষ্টি : পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার শঙ্কা

জ্জ প্রায় ২২ হাজার বন্যাতের্ক উদ্ধার করা হয়েছে জ্জ মৃতের সংখ্যা ৩৮০ ছাড়িয়েছে

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বন্যাদুগর্তদের জন্য ওষুধ সরবরাহ
আবারও দুযোের্গর কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার আকাশে। গত দুইদিন সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি একটু উন্নতি হলেও নতুন করে বঁাধ সেধেছে নতুন নিম্নচাপ। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাজ্যের কয়েকটি জেলায় সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে ফের ‘মেঘভাঙা’ বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। ফলে, সেখানকার বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে, বন্যাকবলিত এই রাজ্য থেকে প্রায় ২২ হাজার বন্যাতের্ক উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমর্কতার্রা। উল্লেখ্য, শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে এই রাজ্যটি। সংবাদসূত্র : এএনআই, বিবিসি, এনডিটিভি, রয়টাসর্ ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপের ফলে কয়েকটি জেলা ছাড়া বাকি অংশে অবশ্য আগামী পঁাচ দিনে বৃষ্টির দাপট কমবে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই চ‚ড়ান্ত সতকর্তা তুলে নিতে রাজি নয় কেরালা সরকার। রাজ্যের কোঝিকোড় ও কান্নুর জেলায় নতুন করে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। এই দুই জেলার ওপর বাড়তি নজরদারিও শুরু হয়েছে। এদিকে, গত কয়েকদিনের তুলনায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। ধীরগতিতে হলেও বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্রায় ২২ হাজার বন্যাতের্ক উদ্ধার করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর টিমগুলোর পাশাপাশি দুযোর্গ মোকাবেলা বাহিনী ও স্থানীয় জেলেরা বন্যার কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকায় পেঁৗছতে সক্ষম হয়েছেন। দুই সপ্তাহের টানা বৃষ্টির কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোতে হেলিকপ্টারের সাহায্যে অতি দরকারি উপাদানগুলো সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। জুনে বষার্কাল শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পযর্ন্ত মৃতের সংখ্যা ৩৮০ ছাড়িয়ে গেছে, শুধু ৮-১৯ আগস্টের মধ্যেই অন্তত ১৬৪ জন মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশই ভ‚মিধসে নিহত হয়েছেন। সরকারি হিসাব বলছে, কেরালায় বন্যা আর ধসের কারণে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছেÑ এমনই মানুষের সংখ্যা ছয় লাখের কাছাকাছি। সবর্স্ব হারিয়ে ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। বন্যাদুগর্তদের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে নিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। এখনো কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এনকুলাম, তিরুমালা, ইদুক্কির ও আলাপুড়া বেশ কিছু এলাকার অবস্থা ভয়াবহ হওয়ায় সেসব এলাকায় পেঁৗছাতে পারেননি উদ্ধারকারীরাও। খাবার তো দূরস্ত, পানীয় জল পযর্ন্ত নেই। দুগর্তদের সাহায্যের জন্য এরই মধ্যেই রাজ্যজুড়ে ৩৭৫৭টি মেডিকেল ক্যাম্প খোলা হয়েছে। পঁাচ হাজার ৬৪৫টি ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেয়া লোকের সংখ্যা বতর্মানে সাত লাখ ২৫ হাজার জনে দঁাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এরপরও রোববার ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শেষ ব্যক্তিকে পযর্ন্ত’ উদ্ধারের প্রত্যয় জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, রাজ্যটির দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা দলের প্রধান অনিল বাসুদেভান জানিয়েছেন, অস্থায়ী ত্রাণশিবিরগুলোতে বায়ু ও পানিবাহিত রোগের সম্ভাব্য প্রাদুভার্ব মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। পানিবাহিত রোগের প্রাদুভার্ব রুখতে কেরালায় জোরেশোরে চলছে ওষুধ বিলির কাজ। কতৃর্পক্ষগুলো এরই মধ্যে একটি ত্রাণশিবির থেকে জলবসন্তে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে সরিয়ে নিয়েছে। উদ্ধারকারী কমর্কতার্রা জানিয়েছেন, রোববার উদ্ধারের সব উদ্যোগ মূলত চেনগান্নুর শহর, আলাপুঝা ও এনাকুলাম জেলাকে কেন্দ্র করে আবতির্ত হচ্ছিল। চেনগান্নুরে প্রায় পঁাচ হাজার লোক আটকা পড়েছেনÑ এমন খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। এর আগে টেলিভিশনে চেনগান্নুরের সংকটের কথা বণর্না করতে গিয়ে স্থানীয় রাজনীতিক সাজি চেরিয়ান কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের একটি হেলিকপ্টার দিন। আমি আপনাদের কাছে ভিক্ষা চাইছি। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন, আমার এলাকার লোকগুলো মরে যাবে। প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। অন্য আর কোনো উপায় নাই, লোকজনকে হেলিকপ্টারে করেই সরাতে হবে।’ বৃষ্টি কমে আসার পর স্থানীয় কিছু বাসিন্দা বাড়ির কী অবস্থা দেখার জন্য এলাকায় গিয়েছিলেন। রাজধানী কোচির চেরানেল্লুর এলাকার বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী টিপি জনি জানান, পুরো বাড়ি কাদায় ঢেকে গেছে। এটি বাসযোগ্য করতে কয়েকদিন ধরে পরিষ্কার করতে হবে। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেয়া লোকজন খাবার ও পানি ছাড়া দিন কাটানোর বণর্না দিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘আমাদের জীবনের সবচেয়ে আতঙ্কজনক সময় ছিল সেগুলো। বিদ্যুৎ নাই, কোনো খাবার নাই, কোনো পানিও নাই- যদিও আমাদের চারদিকেই পানি ছিল।’