করোনাভাইরাস মহামারি

জিনপিংয়ের পদত্যাগ চেয়ে গ্রেপ্তার

'আপনি যখন কোনো সংকটের মুখোমুখি হন, তখন খেই হারিয়ে ফেলেন' ভাইরাস ঠেকাতে কাগুজে নোট পুড়িয়ে ফেলছে চীন

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ব্যর্থতার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে পদত্যাগ চাওয়ায় দেশটির প্রখ্যাত এক মানবাধিকারকর্মী ও আইনের অধ্যাপক গ্রেপ্তার হয়েছেন। চীনে বাকস্বাধীনতার ওপর কর্তৃপক্ষের ব্যাপক কড়াকড়ির মাঝে প্রখ্যাত ওই মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলো। এদিকে, ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর লড়াইয়ে এবার চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক করোনা আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে সব কাগুজে নোট পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান, বিবিসি, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ইয়ে দু এবং হুয়া জি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় দেশটির 'নতুন নাগরিক আন্দোলন' নামের একটি 'স্যোশাল ক্যাম্পেইনের' প্রতিষ্ঠাতা ও আইনের সাবেক অধ্যাপক ঝু ঝিইয়ংকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গুয়াংঝুতে একজন আইনজীবীর বাড়িতে আশ্রয়ে ছিলেন তিনি। তারা বলেন, অধ্যাপককে লুকিয়ে রাখায় আইনজীবী ইয়াং বিন, তার স্বামী ও ছেলেকেও তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে ২৪ ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে নতুন করোনাভাইরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে তথ্য ফাঁসকারী চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃতু্যর ঘটনায় দায়ী কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে অনলাইনে পোস্ট করে আসছিলেন আইনজীবী ইয়াং। আইনের সাবেক অধ্যাপক ঝু ঝিইয়ং চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। এতে করোনাভাইরাস সংকট ও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা এবং চীন শাসনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সক্ষমতার ঘাটতির কথা উলেস্নখ করে পদত্যাগ দাবি করেন ঝু। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আক্রমণ করে ঝু বলেন, 'আপনি সত্য প্রকাশ করতে দেননি এবং প্রাদুর্ভাব জাতীয় বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। আপনি যখন কোনো সংকটের মুখোমুখি হন, তখন খেই হারিয়ে ফেলেন। আমি মনে করি না, আপনি খারাপ মানুষ। তবে আপনি বুদ্ধিমান নন... মিস্টার শি জিনপিং, দয়া করে পদত্যাগ করুন।' করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার মুখে গত শনিবার চীনা এই প্রেসিডেন্ট বলেন, এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গত ৭ জানুয়ারি দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার এই স্বীকারোক্তির পর এই ভাইরাসের সম্ভাব্য ঝুঁকির ব্যাপারে কেন মানুষকে সঠিকভাবে জানানো হয়নি; তা নিয়ে দেশটিতে ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। গত ডিসেম্বরে ফুজিয়ান প্রদেশের জিয়ামেন শহরে ২০ জনের বেশি মানবাধিকার আইনজীবীর একটি গোপন বৈঠকের পর থেকেই পলাতক ছিলেন অধ্যাপক ঝু। দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগ এনে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে চীনা পুলিশ। এর আগেও কারাবন্দি ছিলেন চীনের এই অধ্যাপক। তবে বারবার আইন লঙ্ঘনের দায়ে এবার দীর্ঘমেয়াদে কারাবন্দি হতে পারেন তিনি। ভাইরাস ঠেকাতে কাগুজে নোট পুড়িয়ে ফেলছে চীন এদিকে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে উপদ্রম্নত এলাকার সব কাগুজে নোট পুড়িয়ে ফেলার। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গুয়াংঝু শাখা বলছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নগদ লেনদেনের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল, বাজার এবং বাসে সংগৃহীত সব ধরনের নোট ধ্বংস করবে তারা। গত শনিবার 'পিপলস ব্যাংক অব চায়না'র (পিবিওসি) দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোর শাখা কর্মকর্তাদের করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ ঝুঁকি রয়েছে; এমন খাতগুলো থেকে সব ধরনের কাগুজে নোট ধ্বংস করার জন্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত শহরগুলোর এসব খাত থেকে কাগুজে নোট সংগ্রহ করে ভাইরাসমুক্ত করে সেগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা দেয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফ্যান ইয়াইফাই বলেছেন, গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চীনে অন্তত ৬০০ বিলিয়ন ইউয়ান (৮৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) নতুন ব্যাংক নোট ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে চার বিলিয়ন ইউয়ান নোট চীনা নতুন চান্দ্রবর্ষের আগে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রাণকেন্দ্র উহানে পাঠানো হয়। তার এমন মন্তব্যের পর দেশটিতে নতুন নোট প্রত্যাহার ও ধ্বংস করার নির্দেশ আসে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, কাগুজে নোট জীবাণুমুক্ত করার জন্য উচ্চ তাপমাত্রা অথবা অতিবেগুনী রশ্মির ব্যবহার করা হবে। তারপর এসব নোট ১৪ দিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে।