করোনাভাইরাস আতঙ্ক

অবশেষে মুক্তি প্রমোদতরির যাত্রীদের

দীর্ঘ ১৪ দিন পর ছাড়পত্র পেলেন প্রিন্সেস ডায়মন্ডের সুস্থ ৫০০ আরোহী তারা নিজেদের দেশে ফিরতে শুরু করেছেন

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রমোদতরি থেকে নেমে আসছেন যাত্রীরা
ভয়াবহ কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর প্রমোদতরি প্রিন্সেস ডায়মন্ডের শত শত যাত্রী অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন। এই প্রমোদতরির কোয়ারেন্টাইন মেয়াদ শেষ হওয়ায় যেসব যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি বুধবার থেকে তারা নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে শুরু করেছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিনহুয়া জাপানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বলছে, রাজধানী টোকিওর ইয়োকোহামা বন্দরে নোঙ্গররত করোনায় বিপর্যস্ত প্রিন্সেস ডায়মন্ডের প্রায় ৫০০ যাত্রী এই প্রমোদতরি ছেড়েছেন। এক যাত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়ার পর গত ৩ ফেব্রম্নয়ারি থেকে এই বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে ছিল প্রিন্সেস ডায়মন্ড। কার্নিভাল কর্পোরেশনের বিলাসবহুল এই প্রমোদতরিতে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ যাত্রী ছিলেন। করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের বাইরে সর্বোচ্চসংখ্যক আক্রান্ত এখন এই প্রমোদতরিতে। সেখানে ৫৪০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া গেছে। প্রমোদতরিটি থেকে এরইমধ্যে তিন শতাধিক নাগরিককে ফিরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের অন্যান্য দেশও তাদের নাগিরকদের ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। শিগগিরই সেখানে অস্ট্রেলিয়ার একটি বিমান জাপানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এই বিমানে করে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। প্রমোদতরিটির অস্ট্রেলীয় যাত্রী ভিকি প্রিসল্যান্ড বলেন, 'আমরা সৌভাগ্যবান। আমরা প্রমোদতরিটির একটি কক্ষ, ব্যালকনি এবং লাউঞ্জ এলাকায় আবদ্ধ ছিলাম। এই কেবিনে আবদ্ধ থাকার পর আমি তরিটি থেকে নামার জন্য উদগ্রীব।' তবে জাপানের কর্মকর্তারা বলছেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাদের শরীরে করোনার আলামত পাওয়া যায়নি, শুধুমাত্র তারাই প্রমোদতরি ছাড়ার অনুমতি পাবেন। একই সঙ্গে যাদের শরীরে করোনার লক্ষণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু আক্রান্তদের সঙ্গে ছিলেন; তারা আবারও অতিরিক্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রী হয়েছিল বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশের লোক। এই প্রমোদতরিটি বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ ছড়ানোর উৎস হয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। জাহাজে কোয়ারেন্টাইনে অবস্থার কঠিন পরিস্থিতির বর্ণণার দিয়েছেন যাত্রীরা। প্রথমে তাদের নিজ নিজ কেবিনে পৃথক অবস্থায় থাকতে হয়, পরে তাদের জাহাজের ডেকে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। আক্রান্তদের শনাক্তের পর প্রমোদতরি থেকে নামিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালগেুলোতে ভর্তি করা হয়। এটির আরও কিছু যাত্রীর শরীরে ভাইসরাটির অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও তারা আক্রান্তদের সঙ্গে একই কেবিনে থাকায় তাদের আরও কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। গত বছরের শেষ দিন থেকে চীনের উহানে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ২০১০ জনে দাঁড়িয়েছে আর আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে টানা দ্বিতীয়দিনের মতো নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। মহামারির শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা দুশ্চিন্তায় থাকলেও করোনার প্রকোপ কমে আসায় এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফিরেছে। হুবেই প্রদেশ থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের লাগাম টানতে কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটি উৎপাদন খাতের গতি আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।