করোনাভাইরাস মহামারি

উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরিয়ায় জোরালো পদক্ষেপ

জ্জ দেশটিতে আক্রান্ত ২০৮ জন জ্জ দায়েগু ও চেয়ংদোকে 'স্পেশাল জোন' ঘোষণা জ্জ ইউক্রেনে চীনফেরত যাত্রীদের বাসে বিক্ষুব্ধদের হামলা

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীন ও জাপানে আটকে থাকা প্রমোদতরীর পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের দেশে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগুরে এক আক্রান্তকে বিশেষ ব্যবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা -এপি/আউটলুক ইনডিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কা আর আতঙ্ক বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার ৫৩ জন নতুন আক্রান্তকে শনাক্তের পর শুক্রবার আরও ৫২ জনকে আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৮ জনে। এদিকে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দেশটিতে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ কোরিয়ার দুই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেয়ংদোকে 'স্পেশাল কেয়ার জোন' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, স্পেশাল কেয়ার জোন ঘোষণা করা দায়েগু শহর ও এর আশপাশের অন্তত ১১০ জন বাসিন্দা এখন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। দায়েগু শহরে ২৫ লাখ মানুষের বাস। শহরটির মেয়র অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট ঘোষণা করার পর শপিং মল, রেস্তোরাঁ এবং একাধিক সড়ক এখন বন্ধ। চীন ও জাপানে আটকা থাকা প্রমোদতরীর পর সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্তের দেশে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃতু্যর ঘটনাও ঘটেছে। সাম্প্রতিক এই বাস্তবতাকে 'জরুরি পরিস্থিতি' বলে বর্ণনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সাই-কিয়ুন। তিনি বলেন, 'আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন মানুষদের তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে ও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে। সরকার অসুস্থদের জন্য শয্যা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত করছে।' তিনি সতর্ক করেন, ভাইরাসটি এখন স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামরিক সদস্যদের ঘাঁটি থেকে অন্যখানে চলাচলের ওপরও বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এদিকে, দেশটিতে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগুর শিনচেওনজি চার্চ অব জেসাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কোরিয়ান রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র এক বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে। ওই চার্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত ৮০ জন এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। যার শুরু হয়েছিল ৬১ বছরের এক নারীর মাধ্যমে। এছাড়া উলিস্নখিত চার্চটির চার শতাধিক সদস্যের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা গেছে। যদিও তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। দায়েগু শহরের মেয়র কুন ইয়ং শুক্রবার এই তথা জানান। শহরে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বেশ কিছু সেনা করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সকল সেনাকে ব্যারাক থেকে অন্যখানে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া সামরিক বাহিনীতে কাজ করেন, এমন কোনো সদস্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে পারবেন না এবং কোনো অতিথিও তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। চীনের হুবেই প্রদেশে করোনাভাইরাসে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও বৃহস্পতিবার আরও ১১৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য কমিশনের নিয়মিত বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ২৩৩ জনে পৌঁছেছে। চীনের বাইরে হংকং, ফিলিপাইন, ফ্রান্স এবং জাপান, ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃতু্য হয়েছে। ইউক্রেনে চীনফেরতদের বাসে হামলা বিক্ষুব্ধদের এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্কে ইউক্রেনে চীন থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের বহনকারী গাড়িতে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। বৃহস্পতিবার এ হামলা চালানো হয়। চীনফেরত এসব নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য ইউক্রেনের শহর কেন্দ্রীয় পোলতাভা এলাকার নোভি সাঞ্জরাইর একটি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা একটি ভুয়া মেইলের মাধ্যমে জানতে পারে, গাড়িতে থাকা চীনফেরত এই ব্যক্তিরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে তারা এ হামলা চালিয়েছে। যদিও বিক্ষোভকারীরা হামলার পর সহমর্মিতা জানিয়েছে বলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন। বৃহস্পতিবার ৪৫ জন ইউক্রেনিয়ান ও ২৭ জন বিদেশি নাগরিক চীনের উহান থেকে ইউক্রেনে ফিরে আসে। চীনে মহামারি আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের আতঙ্কে তাদেরকে ছয়টি বাসে করে দেশটির একটি হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছিল। এমন সময় এ কান্ডটি ঘটে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, উহানফেরত একজনের শরীরের জ্বরের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আগত যাত্রীদের বেশিরভাগের বয়সই ৩০ বছরের নিচে।