করোনাভাইরাস

বাড়ছে চীনবিরোধী মনোভাব

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাণঘাতী 'কভিড-১৯' করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন সম্পর্কে বৈরী মনোভাব বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় তা বাস্তবিক উদ্বেগের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জাপানে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে 'চীনারা জাপানে এসো না' হ্যাশট্যাগ। সিঙ্গাপুরে কয়েক হাজার মানুষ দেশটিতে চীনা নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে একটি আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা একটি প্রতীক তুলে ধরছেন, যাতে বলা হচ্ছে, চীনা ক্রেতাদের স্বাগত জানানো হবে না। ফ্রান্সে একটি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা 'হলুদ সংকেত' প্রকাশ করে সতর্কতা জারি করেছে। কানাডায় একটি স্কুলের অভিভাবকরা দাবি করেছেন সম্প্রতি চীন থেকে ফেরা একটি পরিবারের শিশুদের ১৭ দিনের জন্য শ্রেণিকক্ষে আসতে না দেওয়ার জন্য। দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আর মৃতদের বেশিরভাগই চীনের নাগরিক। এই ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিভিন্ন শহরে চীনবিরোধী মনোভাবের ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। চীনা কর্তৃপক্ষ ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। একই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীন সফর না করার ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। ফলে ভাইরাসটির বিপজ্জনক ছড়িয়ে পড়া চীনবিরোধী মনোভাবে জ্বালানি জুগিয়েছে। এই ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক কখনো কখনো বাস্তবতার চেয়ে বেশি ঘটছে। 'ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই'র এশিয়ান স্টাডিসের সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টি গোভেলা বলেন, 'এসব চীনবিরোধী মনোভাবের নেপথ্যে চীন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা এবং আশঙ্কা রয়েছে। যেগুলো সাম্প্রতিক ভাইরাসের সংক্রমণে আরও বেশি সামনে আসছে।' ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যেমন উহান ও কয়েকটি চীনা শহরে সবগুলো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বাতিল, বিভিন্ন সম্মেলনের আয়োজকদের চীনা প্রতিনিধিদলকে উপস্থিত না হওয়ার আহ্বান। চীনা পর্যটকদের কাছে যেসব বিপণিবিতান জনপ্রিয়, সেগুলো এড়িয়ে চলছেন ব্যাংককের বাসিন্দারা। সিউলের অভিজাত গ্যাংনাম এলাকার একটি পস্নাস্টিক সার্জারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে, তারা চীনাদের সেবা দিতে পারবেন কেবল তখনই, যখন তারা প্রমাণ করতে পারবেন গত ১৪ দিন বা এর বেশি সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় ছিলেন। টোকিওর সুকিজি মাছের বাজারে একটি সুশি রেস্তোরাঁর ৯০ শতাংশ ক্রেতা ছিলেন চীনা নাগরিক। সেখানকার ৭০ বছরের কর্মী ইয়ায়েকো সুয়েনাগা বলেন, কেন চীনা ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে চাইছে না, তা তিনি বুঝতে পারছেন। তিনি বলেন, 'আমি মনে করি না, এটি বৈষম্য থেকে আসছে। সত্যিকারের আতঙ্ক থেকেই মানুষ এমনটি করছে।' ভিয়েতনামের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা হোই অ্যান-এ ব্রেড বক্স নামের একটি রেস্তোরাঁর মালিক চলতি মাসের শুরুতে একটি সাইনবোর্ড টানিয়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে, 'আমরা চীনাদের সেবা দিতে পারছি না, দুঃখিত'। ডানাং রিভারসাইট হোটেল ঘোষণা দিয়েছে, ভাইরাসের কারণে তারা কোনো চীনা অতিথিকে গ্রহণ করবে না। হংকংয়ের কং উইং ক্যাটারিং নামের রেস্তোরাঁ ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছে, তারা শুধু ইংরেজি বা ক্যান্টনিজ (স্থানীয় মাতৃভাষা) ভাষাভাষী লোকদের কাছে খাবার বিক্রি করবে। এই প্রতিষ্ঠানটি হংকংয়ের চীনবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সরব সমর্থক। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতার কারণ কিছুটা তাদের কাছে বোধগম্য। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির 'শোরেনস্টেইন এশিয়া-প্যাসিফিক রিসার্চ সেন্টার'র এশিয়া স্বাস্থ্যনীতি কর্মসূচির পরিচালক কারেন এগলেস্টন বলেন, এক হিসাবে এটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য রোগ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা। তবে ঢালাও ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পোস্ট স্পষ্টভাবেই সীমা অতিক্রম করে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার 'দ্য হেরাল্ড সান' একটি কালো মাস্কের ওপর লিখেছে, 'চীনা ভাইরাস পান্ডা-মোনিয়াম'। দেশটিতে বসবাসরত চীনারা এটিকে 'অগ্রহণযোগ্য বর্ণবাদী বৈষম্যমূলক' বলে একটি আবেদন করেছেন। লা কুউরিয়ের পিকার্ড নামের পর্তুগিজ একটি পত্রিকা 'হলুদ সংকেত' শিরোনাম প্রকাশ করেছে। যদিও পরে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে। জাপানে চীনা পর্যটকদের আচরণ নিয়ে দীর্ঘদিনের হতাশা রয়েছে। সম্প্রতি টুইটারে চীনাদের 'নোংরা' এবং 'রাসায়নিক সন্ত্রাসী' হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস