যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার চাপান-উতোর

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চীনের বাইরে আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় দক্ষিণ কোরিয়া ও ইতালিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে করোনা সংক্রমিত ইতালির রোমের জনশূন্য একটি গির্জা এলাকা -এএফপি অনলাইন
করোনা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার 'চাপান-উতোর' (পালটাপালটি দোষারোপ) চলছেই। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাশিয়ার সঙ্গে সংযোগ আছে এমন অ্যাকাউন্ট থেকে গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, টুইটার, ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে হাজার হাজার প্রোফাইল থেকে এ তত্ত্ব ছড়ানো হচ্ছে। জবাবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন অভিযোগকে ভুয়া বলে নাকচ করে দিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা রাশিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, 'এটা একেবারেই ভিত্তিহীন মিথ্যা গল্প।' এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ রিকার গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসের উৎস সম্পর্কে রাশিয়া ভুল তথ্যের বীজ বুনতে চেষ্টা করছে। অনলাইনে কয়েকটি ভাষায় একটি 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' ছড়িয়ে পড়েছে, চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে এই ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। রিকার যেসব পোস্টের কথা বলছেন, তাতে কোথাও কোথাও করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসকেও দায়ী করা হয়েছে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তৃতীয় ব্যক্তি মারা যান, তখনই মার্কিন মনিটররা অনলাইনে চালানো ভুয়া ও মিথ্যা প্রচারণার বিষয়টি চিহ্নিত করতে সমর্থ হন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেস্নাবাল এনগেজমেন্ট সেন্টারের প্রধান লিয়া গ্যাব্রিয়েল বলেন, 'সে সময় আমরা দেখতে পাই, গুজব ছড়ানোর জন্য তাদের কেমন একটি নিবিড় ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় টিভি, প্রক্সি ওয়েব সাইট এবং সামাজিক মাধ্যমে হাজার হাজার ভুয়া অ্যাকাউন্ট। আর সবাই এই একটি তথ্য প্রচার করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে এর আগে চিলির সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং সিরিয়ার যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সরকারের পক্ষে প্রচারণা চালানো হয়েছিল।' মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ওইসব প্রচারণার কারণে আফ্রিকা এবং এশিয়ার দেশগুলো এখন এ বিষয়ে পশ্চিমা যেকোনো প্রতিক্রিয়াকে সন্দেহের চোখে দেখে। এদিকে রাশিয়ার টিভিতে দেখানো হয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার এবং মৃতু্যর হার বেড়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমা 'এলিট' বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রই দায়ী। রাশিয়ার অন্যতম প্রধান টিভি নেটওয়ার্ক 'চ্যানেল ওয়ান' সম্প্রতি করোনাভাইরাস নিয়ে যত রকম 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' আছে, তা উপস্থাপনের জন্য নিজেদের সান্ধ্যকালীন সংবাদ অনুষ্ঠানে একটি নিয়মিত অংশ বরাদ্দ করেছে। অবশ্য 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' এই চ্যানেলটির নিয়মিত রাজনীতি বিষয়ক টকশোয়েরও নিত্য আলোচ্য বিষয়। সেখানে এরই মধ্যে এমন আলোচনাও হয়েছে, পশ্চিমা বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান; যেমন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, যুক্তরাষ্ট্র বা এর কোনো এজেন্সি কোনো না-কোনোভাবে এই ভাইরাসের উৎপত্তি বা বিস্তারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। নিদেনপক্ষে এই নিয়ে ভীতি ছড়ানোয় যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে, এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই সব আলোচনায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, যাদের বড় অংশ চীনের নাগরিক। এ ছাড়া ৮০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।