ট্রাম্পের ভারত সফর

বাণিজ্যচুক্তি হয়নি, প্রতিরক্ষায় মতৈক্য ট্রাম্প ও মোদির

ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে সিএএ নিয়ে আলোচনা হয়নি বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলবে : দুই নেতার বৈঠকে সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে মঙ্গলবার হায়দরাবাদ হাউসে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের প্রতিনিধি দলের মধ্যেও কথা হয়েছে। তবে সেই আলোচনার ফল হলো, ৩০০ কোটি ডলারের সামরিক চুক্তি নিয়ে দুই দেশের একমত হওয়া এবং তিনটি সমঝোতাপত্রে সই। ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অ্যাপাচি ও রোমিও হেলিকপ্টার কিনবে ভারত। কিন্তু বহুল আলোচিত বাণিজ্যচুক্তি হয়নি। মোদি এবং ট্রাম্প দু'জনেই বলেছেন, বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে আলোচনা চলবে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডয়চে ভেলে, এবিপি বৈঠকের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেমন ভারতের অভ্যর্থনায় আবেগাপস্নুত, তেমনই মোদিও তাকে ভারত সফরের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ভারতীয়রা যেভাবে তাকে স্বাগত ও অভ্যর্থনা জানিয়েছে, তাতে তিনি যে অভিভূত। তিনি বলেন, 'গত দুদিন, বিশেষ করে আহমেদাবাদের মোতেরা স্টেডিয়ামে যেভাবে আমাকে আপনারা স্বাগত জানিয়েছেন, সেটা আমার কাছে বিশাল সম্মানের।' তবে একই সঙ্গে মোদিকে হালকা চালে বলেন, 'ওখানে হয়তো আমার চেয়ে আপনার জন্যই বেশি লোক ছিল। সোয়া লাখ মানুষ স্টেডিয়ামের ভেতরে ছিল। যতবারই আমি আপনার নাম করেছি, তারা উলস্নাসে ফেটে পড়েছে। ভারতের মানুষ আপনাকে খুব ভালোবাসে।' পাল্টা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেননি নরেন্দ্র মোদিও। তিনি বলেন, 'আপনাকে এবং আপনার সঙ্গে আসা মার্কিন প্রতিনিধিদের আমি স্বাগত জানাই।' যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। সরাসরি ভোটের কথা উলেস্নখ না করেও মোদি বলেন, 'আমি জানি, আপনি এখন খুব ব্যস্ত। তবু সময় বের করে ভারত সফরে এসেছেন। তার জন্য আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।' হায়দরাবাদ হাউসে দুই নেতার বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, 'আমাদের প্রতিনিধিদল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অনেকটা এগিয়েছে। আমি আশাবাদী। আমরা এমন একটা চুক্তিতে পৌঁছতে পারবো, যেখানে দুই দেশের প্রভূত সুবিধা হবে। তবে আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৬০ শতাংশ বেড়েছে। আর ভারতে শক্তিক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বেড়েছে ৫০০ শতাংশ।' ট্রাম্প বলেন, 'তিনটি ক্ষেত্রে মূলত আলোচনা হয়েছে, বাণিজ্য সম্পর্ক, শক্তিক্ষেত্র এবং সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থা।' পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্ন করতে তার দেশ ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির দাবি, 'ট্রাম্প হলেন ভারতের খুব বড় বন্ধু। সোমবার ট্রাম্পকে আহমেদাবাদে অসাধারণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত।' ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, পাকিস্তান নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় প্রতিনিধদল মার্কিন ভিসার প্রসঙ্গ তুলেছিল। পরে হায়দরাবাদ হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দপ্রধানমন্ত্রী মোদি চান, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাক। আমাদের মধ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে কথা হয়েছে। এছাড়াও কীভাবে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে মোদির সঙ্গেও কথা হয়েছে। তবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে কথা হয়নি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ভালো করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র।' সামনেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার আগে ভারত সফরে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সুর ছিল ট্রাম্পের গলায়। এ সময় 'ওবামা কেয়ারের' প্রসঙ্গ টেনে ডেমোক্রেটদের তুলাধোনা করেন। তিনি বলেন, 'দিশাহীন এই প্রকল্প।' পাশাপাশি নেভাদা নিয়ে বার্নি স্যান্ডারসকেও আক্রমণ করেন। বললেন, 'আমি জানি, আবার জিতব। আর আমি জিতলে রকেটের মতো চাঙ্গা হবে অর্থনীতি।' ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক অভিবাদন জানানো হয়। সেখানে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ছাড়াও ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিবাদনের পর সস্ত্রীক ট্রাম্প যান রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধী আশ্রমে শ্রদ্ধা জানাতে। সেখানে 'ভিজিটার্স বুকে' ট্রাম্প লিখেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সার্বভৌম ও অপূর্ব ভারতের পাশে শক্তিশালী বন্ধু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটাই ছিল মহাত্মা গান্ধীর ভিশন (লক্ষ্য)। এটা একটা বিশাল সম্মান।' বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ভারত সফরে প্রবল জাঁকজমক ছিল, আড়ম্বর ছিল, কিন্তু আলোচনা থেকে খুব বেশি কিছু বেরিয়ে এলো না। সে দিক থেকে দেখতে গেলে, নিজের দেশে আমেরিকান-ইনডিয়ানদের ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্প ভরপুর চেষ্টা করলেন। কিন্তু দুই শীর্ষনেতার বৈঠক থেকে উলেস্নখযোগ্য কিছু বেরিয়ে এলো না। 'নিউ ইনডিয়ান এক্সপ্রেস'র বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি জানিয়েছেন, 'আসলে দুই দেশই অনড় মনোভাব নিয়েছিল। ভারত তার ডেয়ারি ও পোলট্রি ক্ষেত্র খুলতে চায়নি। যুক্তরাষ্ট্রও ভারতকে খুব বেশি বাণিজ্য সুবিধা দিতে রাজি ছিল না। তাই বাণিজ্যচুক্তি হলো না।' মঙ্গলবার সফরের শেষ দিনে মোদি-ট্রাম্প বৈঠক যখন চলছিল, তখন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প গিয়েছিলেন দিলিস্নর সরকারি স্কুলে 'হ্যাপিনেস ক্লাস' (আনন্দপাঠ) দেখতে। ছোট বাচ্চাদের খুশি রাখার জন্য দিলিস্ন সরকারের প্রয়াসের কথা আগেই শুনেছিলেন তিনি, এবার দেখলেন। ফার্স্ট লেডি স্কুলে ঢুকতেই বাচ্চারা তার কপালে টিপ পরিয়ে দেয়। হাতে তুলে দেয় ফুলের গুচ্ছ। তারপর মেলানিয়া হ্যাপিনেস ক্লাস দেখেন। উলেস্নখ্য, দুই দিনের ব্যস্ত সফর শেষে মঙ্গলবার রাতে ট্রাম্প ভারত ছেড়ে নিজ দেশের পথে রওনা হন।