করোনা মহামারি

ছড়িয়ে পড়েছে ৩৭ দেশে

ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া : প্রেসিডেন্ট মুন

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই বাড়ছে কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। এ কারণে এরই মধ্যে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও)। এদিকে, চীনের বাইরে বিশ্বের ৩৭টি দেশ ও অঞ্চলে নতুন করে ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। আর তাই নতুন নতুন দেশে এটি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ায় বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংবাদসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, সিনহুয়া চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে অন্তত দুই হাজার ৭০১ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত ৮০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে শুধু চীনেই প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজার ৬৬৩ জন। চীনের বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে। ইতালিতে আক্রান্ত ২২৯, প্রাণহানি সাতজনের। আর ইরানে অন্তত ৪৭ আক্রান্ত ও ১৪ জন মারা গেছেন। এছাড়া জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রমোদতরী 'প্রিন্সেস ডায়মন্ডের' ছয় শতাধিক যাত্রীর শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। গত কয়েকদিনে হঠাৎ করেই ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সব দেশকে তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, ভাইরাস সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্যও জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি। যুক্তরাজ্যের 'ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গোলা'র স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ক অধ্যাপক পল হান্টার-ও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তা বেশ উদ্বেগজনক।' এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান মার্ক রায়ান বলেছেন, 'বিপর্যয় মোকাবেলায় এখন যা যা করা সম্ভব তার সব কিছুই করতে হবে আমাদের।' সংস্থাটির মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, 'দেশগুলো পদক্ষেপ না নিলে এ ভাইরাস আরও বেশি হারে ছড়িয়ে পড়বে। তাই প্রতিরোধের চেষ্টা এখন খুবই জরুরি।' তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন দেশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ভাইরাসকে বেশিদূর ছড়াতে না দেওয়ার কারণে এ মুহূর্তে পরিস্থিতিকে মহামারি হিসেবে দেখা হচ্ছে না। তবে মহামারের মতো এ ভাইরাস ছড়াতে থাকলেও এর বিস্তারের হার সীমার মধ্যে রাখা জরুরি।' ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া : প্রেসিডেন্ট মুন এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক' আকার ধারণ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন। মঙ্গলবার দেশটিতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রাণকেন্দ্র দায়েগু শহর পরিদর্শনে গিয়ে একথা বলেন তিনি। নতুন করে আরও ১৪৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭৭ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে 'কোরিয়া সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন' (কেসিডিসি)। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির বাইরে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত এখন দক্ষিণ কোরিয়ায়। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় বিশ্বের ১২তম বৃহৎ অর্থনীতির এই দেশটিতে বেশ কিছু ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে। বাতিলের এই তালিকায় আছে বিশ্ব টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা, কে-লিগ ফুটবলসহ দেশটির পার্লামেন্টের অধিবেশনও। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম দায়েগু শহর এবং প্রতিবেশী নর্থ জিওংস্যাং প্রদেশের বাসিন্দা। দায়েগু শহরের একটি হাসপাতালে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জরুরি ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন বলেন, পরিস্থিতি খুবই মারাত্মক। তবে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সব ধরনের সরকারি সহায়তার ঘোষণা দেন তিনি। মুন জায়ে ইন বলেন, 'এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা বিজয় অর্জন করবোই।' গত কয়েকদিন ধরে ২৫ লাখ মানুষের শহর দায়েগুর রাস্তাঘাট যেন জনশূন্য ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। তবে শহরটির অল্প কিছু দোকানপাট খোলা রয়েছে; যেখানে শুধুমাত্র মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা অথবা জ্বর দেখা দিলে লোকজনকে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টের অধিবেশনে অংশ নেওয়া এক ব্যক্তির শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবারের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির সরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা 'কোরিয়ান এয়ার'র এক কেবিন ক্রুসহ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।