হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই

নজিরবিহীন দাঙ্গায় রক্তাক্ত দিলিস্ন

নিহত বেড়ে ২৩, আহত দেড় শতাধিক মানুষ সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ'র জন্য অনুরোধ কেজরিওয়ালের নীরবতা ভেঙে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের আর্জি মোদির, উদ্বিগ্ন মমতা

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সহিংসতার সাক্ষী হলো ভারতের রাজধানী দিলিস্ন। গত টানা তিনদিন ধরে নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পক্ষে-বিপক্ষের সমর্থকদের সংঘাতে যেন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে নগরীটি। বিক্ষুব্ধদের হিংসার আগুনে ভস্মিভূত ছবির এই গাড়িটিই যেন দাঙ্গার প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটে উঠেছে -পিটিআই/আউটলুক ইনডিয়া
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) পক্ষে-বিপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় নজিরবিহীন দাঙ্গায় রক্তাক্ত ভারতের রাজধানী দিলিস্ন। এদিকে, দাঙ্গা রুখতে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর বিপুল সদস্য নগরীর সহিংসতাকবলিত এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। গত তিন দিনের দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৩ জনে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক মানুষ; হতাহতদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান উভয়েই রয়েছে। সংবাদসূত্র : টাইমস অব ইনডিয়া, এনডিটিভি, বিবিসি নগরীর দাঙ্গাকবলিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোথাও কোথাও অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এসেছে। বুধবার সকালে এই এলাকাগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রের মতো দেখাচ্ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা জানিয়েছেন। বুধবার সকালে নগরীর চান্দবাগ এলাকায় সিএএ-এর সমর্থক ও বিরোধীদের পরস্পরের দিকে পাথর নিক্ষেপের মধ্যেই আএএফ, সিআরপিএফ ও দিলিস্ন পুলিশের বহু সদস্য সেখানে অবস্থান নেয়। এদিন সকালে এক টুইটে দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল পরিস্থিতিকে 'ভয়ানক' বলে বর্ণনা করে দাঙ্গাকবলিত এলাকাগুলোতে আশু সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছেন। দিলিস্নর পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে অমিত শাহের সঙ্গে একদফা বৈঠক করেছেন কেজরিওয়াল। তবে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, সহিংসতা রুখতে কেজরিওয়ালের প্রশাসনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি শান্তির আহ্বান জানানো ছাড়া সহিংসতা নিয়ে কোনও মন্তব্যও করতে দেখা যায়নি তাকে। এর আগে মঙ্গলবার রাতভর কেজরিওয়ালের বাসভবনের সামনে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বহু লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তারা সহিংসতার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়। ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য দিলিস্ন পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। মঙ্গলবার দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল দিলিস্নর মুসলমান অধু্যষিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল। দিলিস্নতে এমন সহিংসতা গত কয়েক দশকেও দেখা যায়নি। উত্তেজনা যেন না ছড়ায়, সেজন্য বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে সংঘাতের খবর প্রচারের ক্ষেত্রে সাবধান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। নীরবতা ভেঙে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের আহ্বান মোদির এদিকে, ভারতের রাজধানী দিলিস্নতে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে নীরবতা ভেঙে সংঘাত বন্ধের আর্জি জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক বিবৃতিতে মোদি বলেন, 'শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে আমি আমার দিলিস্নর ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।' সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন, তিনি রাজধানীর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। এক টুইট বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, দিলিস্নর বিভিন্ন অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো। তিনি বলেন, 'আমাদের নৈতিকতার মূল বিষয় হচ্ছে শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা। আমি দিলিস্নতে অবস্থানরত আমার বোন এবং ভাইদের কাছে অনুরোধ করব যে, তারা যেন সব সময় শান্তি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রেখে চলেন। শান্তি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা ফিরিয়ে আনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উলেস্নখ করেছেন তিনি। দিলিস্ন নিয়ে উদ্বিগ্ন মমতা এদিকে, ভারতের রাজধানী দিলিস্নর সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মঙ্গলবার কলকাতা ছাড়ার আগে দেশে শান্তি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ওই দিন সন্ধ্যায় শহর থেকে ভুবনেশ্বরে যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'সমগ্র দেশের মানুষের কাছে শান্তি বজায় রাখার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।' মমতা বলেন, 'যা চলছে, তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।' দিলিস্নর সহিংসতা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'কেন এসব চলছে আমি জানি না। আমরা ঘটনার ওপরে নজর রাখছি। আমি মনে করি, সবার শান্তি বজায় রাখা উচিত। আমাদের দেশ শান্তির দেশ, মানবতার দেশ, ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলার দেশ। এখানে হিংসার কোনও স্থান নেই।' দিলিস্নর ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের প্রতিটি থানাকেও সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিটি থানা যাতে নিয়ম মেনে এলাকায় নজরদারি চালায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সেই নির্দেশ দিয়েছেন।