করোনার বিস্তার

অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশে থাবা

মৃত বেড়ে দুই হাজার ৮০০ ছড়িয়ে পড়েছে ৫০ দেশে করোনার হানায় বন্ধ হলো জাপানের সব স্কুল এবার পাকিস্তানেও শনাক্ত

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এদিকে, ইতালির মাধ্যমে ইউরোপেও মহামারি আকার ধারণ করেছে এটি। বুধবার দেশটির রাজধানী রোমে সংক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে মুখে মাস্ক পরে রাস্তায় বের হন এক নারী -সিনহুয়া
চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া কভিড-১৯ করোনাভাইরাস থাবা বসিয়েছে অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবে বুধবার পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার ৮০০ মানুষের প্রাণ গেছে, এদের মধ্যে দুই হাজার ৭৪৪ জন মারা গেছেন চীনের মূল ভূখন্ডেই। এছাড়া বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বুধবার নতুন দেশ হিসেবে ব্রাজিল, নরওয়ে, গ্রিস, রোমানিয়া, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ মেসেডোনিয়া ও আলজেরিয়ায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তর ইতালি থেকে ব্রাজিলে ফেরা একজনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্তের পর একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের সব মহাদেশে ভাইরাসটির উপস্থিতি রেকর্ড হয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, এএফপি দিন যত যাচ্ছে, ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ক্রমেই একটি বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিচ্ছে। প্রথমবারের মতো একদিনে চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা দেশটির ভেতরে আক্রান্তের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি আরও জোরদার করেছে। বুধবার চীনে নতুন করে ৪৩৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। এদিন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের ৪০৬ জনের তুলনায় একটু বেড়েছে। এতে চীনের মূল ভূখন্ডে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৮ হাজার ৪৯৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিন দেশটিতে আরও ২৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এটি ২৮ জানুয়ারির পর চীনে করোনাভাইরাসে একদিনে সবচেয়ে কম মৃতু্যর সংখ্যা। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের উৎস হুবেই প্রদেশে এদিন নতুন করে ৪০৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর বাইরে চীনে অপর তিন জনের মৃতু্য হয়েছে রাজধানী বেইজিং এবং হেইলংজিয়াং ও হেনান প্রদেশে। হুবেইয়ের বাইরে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ জন। ভাইরাসটি এখন চীনের বাইরে প্রায় ৫০টি দেশে ছড়িয়েছে এবং এসব দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৫০০ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে মৃতের সংখ্যা ৫৮ জনে পৌঁছে গেছে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা এখন দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন ও ১৩ জনের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার নতুন আক্রান্তের সংখ্যা দেশটি চীনকেও ছাড়িয়ে যায়। এদিন এখানে ৫০৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হন। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক সদস্যও ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এশিয়ার বাইরে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে ইতালিতে। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অন্তত ৪০০। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ ইতালি এক লাখ লোককে কোয়ারেন্টাইন করেছে বলে জানা গেছে। দেশটিতে ভাইরাস আক্রান্ত ১২ জনের মৃতু্য হয়েছে। ইরানে তুলনামূলক কম লোক আক্রান্ত হলেও চীনের পর এ দেশটিতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি লোকের মৃতু্য হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ১৩৯ জন ছিল এবং মৃতু্য হয়েছে ১৯ জনের। এর পাশাপাশি জাপানে ৮ জন, হংকং ও ফ্রান্সে দুই জন করে এবং তাইওয়ানে একজন ও ফিলিপাইনে অপর একজনের মৃতু্য হয়েছে। করোনার হানায় বন্ধ হলো জাপানের সব স্কুল এদিকে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বন্ধ হয়েছে জাপানের সব স্কুল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘোষণা দিয়েছেন। সাময়িক বন্ধ হওয়া এসব স্কুল খুলবে আগামী এপ্রিলে। ৯ শতাধিক জাপানি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর দেশজুড়ে সর্তকতা জারি হয়েছে। দিনের শুরুতে উত্তরের প্রদেশ হোক্কাইডোর স্থানীয় প্রশাসন সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা এলো। শিনজো আবে বলেন, 'প্রতিটি অঞ্চলে বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা আগামী এক বা দুই সপ্তাহ অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সরকার অন্যদের মধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।' এবার পাকিস্তানেও করোনা শনাক্ত পাকিস্তানেও হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে এখন পর্যন্ত দু'জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা বুধবার এক টুইটবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ইরান থেকে এই ভাইরাসের প্রকোপ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্যই দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসলামাবাদ। তবে সীমান্ত বন্ধ করেও এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো গেল না।