প্রতিবাদ থেকে দাঙ্গা

থমথমে দিলিস্নতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

জ্জ সহিংসতা তদন্তে দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন জ্জ সরকারকে রাজধর্ম শেখাবেন না, সোনিয়াকে বিজেপি জ্জ ওআইসির বিবৃতি দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রতিক্রিয়ায় ভারত

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
দাঙ্গা-সহিংসতার আপাতত যবনিকা ঘটলেও ভারতের রাজধানী দিলিস্নর বিভিন্ন স্থানে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নগরীর উত্তর-পূর্বের যেসব এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার লোকজন এখনো চাপা উত্তেজনা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। উত্তর দিলিস্নর একটি দাঙ্গা বিধ্বস্ত সড়কে উড়ছে ভারতের জাতীয় পতাকা, আর রাস্তাঘাট সুনসান -পিটিআই/আউটলুক ইনডিয়া
দাঙ্গা-সহিংসতার পর ভারতের রাজধানী দিলিস্নর বিভিন্ন স্থানে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দিলিস্নর উত্তর-পূর্বের যেসব জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার লোকজন এখনো চাপা উত্তেজনা আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে, সংঘাতের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ জনে। আহত হয়েছেন আরও দুই শতাধিক মানুষ। গুরুগ্রামসহ কয়েকটি স্থানে জারি করা হয়েছে হাই-অ্যালার্ট বা সর্বোচ্চ সতর্কতা। সহিংসতা তদন্তে দু'টি বিশেষ তদন্তকারী দলও (সিট) গঠন করা হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, হিন্দুস্থান টাইমস, এবিপি নিউজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের আগে রোববার রাজধানী দিলিস্নতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থক ও বিরোধীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় রূপ নেয়। সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৮টি এফআইআর দায়ের করেছে দিলিস্ন পুলিশ। নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনায় কারা কারা জড়িত, কারা অর্থ জোগাচ্ছে, তা খুঁজে বের করার জন্য দিলিস্ন হাইকোর্ট শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকার, দিলিস্ন সরকার ও পুলিশকে নোটিশ দিয়েছে। ঘটনার তদন্তে এসব তথ্য প্রয়োজন। আগামী ৩০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন কেন্দ্র, দিলিস্ন সরকার ও পুলিশকে এ ব্যাপারে জানাতে বলেছে হাইকোর্ট। এছাড়া দিলিস্নতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই কমিশনার বদল করা হয়েছে। দিলিস্নর নতুন পুলিশ কমিশনার হচ্ছেন এসএন শ্রীবাস্তব। এরআগে, সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষুব্ধ দিলিস্ন হাইকোর্ট পুলিশকে ঘৃণা ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছে। চার বিজেপি নেতার বক্তৃতার ভিডিও দেখার পর আদালত এমন নির্দেশনা দেয়। ওই বিজেপি নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রের মোদির সরকারের মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ও স্থানীয় নেতা কপিল মিশ্রও আছেন। রোববার বিকালে এই কপিল মিশ্রের সমাবেশ থেকেই সহিংসতা শুরু হয় বলে অভিযোগ আছে। এদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ৩৬ ঘণ্টায় দিলিস্নর কোথাও বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। মানুষের উচিত হবে গুজবে কান না দেওয়া এবং যে দুস্কৃতকারীরা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়াতে চাইছে, তাদের ফাঁদে পা না দেওয়া। এর আগে গত রোববার থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর টানা কয়েকদিন পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। ১৪৪ ধারা অমান্য করে লোকজন রাস্তায় বন্দুক, লোহার রড, লাঠি হাতে নেমে আসে। এতে পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুল, বহু বাড়ি ও দোকানে। উন্মত্ত জনতার হাতে প্রাণ ঝরে গেছে অনেক। ভাঙচুর হয়েছে গাড়িও। এর আগে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস দিলিস্ন পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে নজরে রেখেছেন বলে জানিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংযত থাকা উচিত- এ বিষয়টির ওপরই গুতেরেস জোর দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যত দ্রম্নত সম্ভব শান্ত পরিবেশ এবং স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলেও মত দেন তিনি। সহিংসতা শুরুর তিন দিন পর চতুর্থ দিন প্রথমবারের মতো এক বিবৃতিতে 'শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের' ডাক দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে একের পর এক 'রিভিউ মিটিং' করে গেলেও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সরকারকে রাজধর্ম শেখাবেন না : সোনিয়াকে বিজেপি এদিকে, দিলিস্নতে সাম্প্রদায়িক হানাহানির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেসের অন্তর্র্বর্তীকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। তবে শুক্রবার বিরোধীদলীয় নেত্রীর সমালোচনার জবাব দিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্যের পাল্টা আক্রমণে বিজেপির এ মন্ত্রী সরকারকে রাজধর্ম না শেখানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর বলেন, 'যেখানে কংগ্রেসের রেকর্ড নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে তাদের নেত্রীর কোনো প্রয়োজন নেই কেন্দ্রীয় সরকারকে তার কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়ার। সোনিয়া গান্ধী দয়া করে আমাদের রাজধর্ম শেখাবেন না।' দিলিস্নর সহিংসতায় ওআইসির বিবৃতি দায়িত্বজ্ঞানহীন : ভারত অন্যদিকে, দিলিস্নতে সহিংসতার ঘটনায় ৫৭টি মুসলমান রাষ্ট্রের সংগঠন অরগানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) বিবৃতির সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওআইসির বক্তব্যকে 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে আখ্যায়িত করেছে। এর আগে দিলিস্নতে চলমান সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল ওআইসি।