থমথমে সিরিয়ার ইদলিব

বাশার বাহিনীর বিমান হামলায় ৩৩ তুর্কি সেনা নিহত

জ্জ যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জাতিসংঘ ও পশ্চিমাদের জ্জ মিত্র তুরস্কের পাশে থাকার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের জ্জ বাশারের সমর্থনে সিরিয়ায় যুদ্ধজাহাজ পাঠাল রাশিয়া

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনীর বিমান হামলায় তুরস্কের অন্তত ৩৩ সেনা নিহত হয়েছে বলে যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধপরিস্থিতি পর্যবেক্ষক সংস্থা 'সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' জানিয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহস্পতিবার হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আঙ্কারা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আনাদোলু এজেন্সি, রয়টার্স এদিকে, হামলার পাল্টা হিসেবে তুরস্কও পরে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় স্থল ও বিমান হামলা চালায়। বাশার বাহিনী বিদ্রোহীদের হাত থেকে ইদলিবের নিয়ন্ত্রণ নিতে রাশিয়ার সহযোগিতায় গত কয়েকদিন ধরেই হামলার পরিমাণ ও তীব্রতা বাড়িয়ে চলছে। বৃহস্পতিবারের হামলা তারই নজির। তুরস্কের হাতয় প্রদেশের গভর্নর রাহমি দোগানও সিরীয় হামলায় অন্তত ৩৩ তুর্কি সেনা নিহতের কথা স্বীকার করেছেন। আহতের সংখ্যা অগণিত, চিকিৎসার জন্য তাদেরকে তুরস্কের ভেতর নিয়ে আসা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তুর্কি যোগাযোগ পরিচালক ফাহরেত্তিন আলতুন বলেন, 'সিরীয় সরকারের সব লক্ষ্যবস্তু পরিচিত। আর এগুলো তুরস্কের বিমান ও স্থলবাহিনীর আয়ত্বে রয়েছে। বাশার বাহিনীর মতো অনুরূপ হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আঙ্কারাও।' এদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান বৃহস্পতিবার দেশটির শীর্ষপর্যায়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করার পরপরই ইদলিবে বিমান হামলার খবর পাওয়া যায়। তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার ও ঊর্ধ্বতন সামরিক কমান্ডাররা পরে সিরিয়ার সীমান্ত থেকে বাশার বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় স্থল ও বিমান হামলার নির্দেশনা দেন। সিরীয় বাহিনী হামলা চালালে তার প্রতু্যত্তর দেওয়া হবে বলে এরদোয়ান আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। তুরস্কের এ প্রেসিডেন্টের চাওয়া ছিল, বাশার আল-আসাদ বাহিনী ইদলিবে অভিযান চালালেও তারা যেন আঙ্কারার পর্যবেক্ষণ পোস্টগুলো থেকে দূরে থাকে। সিরিয়ার সরকার ও রাশিয়া এ দাবি প্রত্যাখান করে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। বৃহস্পতিবারের এ পাল্টাপাল্টি হামলার পর ন্যাটোর মহাপরিচালক জেনারেল জেনস স্টল্টেনবার্গ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এছাড়া ন্যাটো মিত্র তুরস্কের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, 'আমরা আমাদের ন্যাটো মিত্র তুরস্কের পক্ষে রয়েছি। বাশার বাহিনী, রাশিয়া ও ইরান সমর্থিত বাহিনীগুলোর নিন্দনীয় আগ্রাসন বন্ধেরও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা। সংকটকালে তুরস্ককে কী ধরনের সহযোগিতা দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখছি আমরা।' এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইদলিব পরিস্থিতিতে 'গভীর উদ্বেগ' জানিয়ে সেখানে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানিয়েছেন। বেলজিয়াম ও জার্মানি এক বিবৃতিতে সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিক হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে পশ্চিমাদের এসব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আহ্বান উড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া বলছে, সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করাই এখন সিরিয়া সংকট নিরসনের একমাত্র পথ। বৃহস্পতিবারের পাল্টাপাল্টি হামলা নিয়ে বাশার বাহিনীর তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। উলেস্নখ্য, ২০১১ সাল থেকে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাতে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে ইদলিব হলো বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটি। সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও দেশটির মিত্র রাশিয়া ২০১৮ সালের অস্ত্রবিরতি সীমানার দিকে অগ্রসর না হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইদলিবমুখী অভিযান শুরু করেছে। ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই অভিযানে ১০ লাখ বেসামরিক নাগরিক ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই শিশু। সিরিয়ায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রাশিয়ার এদিকে, সিরিয়ায় তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ এলাকা ইদলিবে রাশিয়ার সমর্থনে বাশার বাহিনীর হামলা জোরদারের মধ্যে দেশটির জলসীমায় যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, তুরস্ক এবং সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই নতুন করে ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করল রাশিয়া। এছাড়া রাশিয়া দাবি করেছে, তুরস্ক তাদের সেনাদের অবস্থানের তথ্য দিতে ব্যর্থ হওয়ায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে অবস্থান করায় তুর্কি সেনারা হামলার শিকার হয়েছে। তুরস্কের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বাশার সরকারের মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে রুশ-তুর্কি উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইলবাহী দুটি যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করেছে রাশিয়া।