বিশ্বের চোখে ধুলা দিচ্ছে চীন

প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস
চীনে প্রতিদিনই বাড়ছে কভিড-১৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে এর ভয়াবহ পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা গেলেও চীনা গণমাধ্যমে তার কোনো লক্ষণই নেই। সংক্রমণের ভয়াবহতা তুলে না ধরে ডাক্তার-নার্সদের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী শুনিয়েই জনগণকে শান্ত রাখতে চাইছে শি জিনপিংয়ের সরকার। তবে চোখে ধুলা দেওয়া হচ্ছে সেখানেও। করোনা সংকটে মেডিকেল কর্মীরাও সুখে নেই, তাদের অনেককেই জোর করে কাজে রাখা হচ্ছে, নেই সংক্রমণ রোধের পর্যাপ্ত পোশাক-মাস্ক-সরঞ্জাম। তবে এসব নিয়ে মুখ খুললেই বিপদ! মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গাংশু প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের অজুহাতে ১৪ নারী কর্মীর চুল কেটে দেয় একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সরকারপন্থি সংবাদমাধ্যম 'গাংশু ডেইলি' সামাজিক যোগাযোমাধ্যম 'উইবো'তে এ ঘটনার ভিডিও প্রকাশ করে। সংবাদমাধ্যমটি এ ঘটনাকে নারীকর্মীদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ হিসেবে প্রচার করলেও এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। 'প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে নারীর শরীর ব্যবহার বন্ধের' বিষয়ে লেখা একটি প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়ে চীনা মেসেজিং অ্যাপ 'উইচ্যাটে'। সেখানে অসংখ্য ব্যবহারকারী প্রশ্ন তুলেছেন, এসব নারীকে জোর করে চুল কাটতে বাধ্য করা হয়েছে কিনা বা বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো ভিত্তি আছে কিনা। পরে প্রবল সমালোচনার মুখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেয় তারা। নারীদের চুল কাটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় মূলত চীন সরকারের প্রোপাগান্ডা এবং এ নিয়ে জনগণের মধ্যে বাড়তে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং ৭০ হাজারের ওপর আক্রান্ত হয়েছেন বলে যে তথ্য দিচ্ছে কমিউনিস্ট সরকার, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ চীনাদের মনেই। এই ক্ষোভের আগুন নেভাতেই ডাক্তার-নার্স-রোগীদের নায়কোচিত ঘটনাগুলো বেশি করে সামনে আনছে চীনের সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো। এসবের প্রতিবাদ করে কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখলে বা 'প্রকৃত অবস্থা' তুলে ধরলেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। চীন গুগল, ফেসবুক, টুইটারের মতো মাধ্যমগুলো বন্ধ করে রাখায় দেশটির প্রায় দেড়শ কোটি মানুষ উইচ্যাট-উইবো'র মতো স্থানীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এসব মাধ্যমে সরকারপন্থি ইতিবাচক খবরগুলো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে, তবে সরকাবিরোধী কিছু লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে গায়েব করে দেওয়া হচ্ছে সেগুলো। চলতি মাসের শুরুতে লি ওয়েনলিয়াং নামে এক তরুণ চিকিৎসকের মৃতু্যতে চীনাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এর পরপরই যোগাযোগমাধ্যমে 'বাকস্বাধীনতার' দাবি ওঠে জোরেশোরেই। ফলে করোনা সংকটের মধ্যে প্রথমবারের মতো বড় চাপের মুখে পড়ে চীন সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে জনগণকে শান্ত করতে প্রশাসনের শতাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পদচু্যত করা হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন পর জনসম্মুখে আসেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিছুদিন আগে সাত শীর্ষ নেতাকে ডেকে হৃদয়স্পর্শী গল্পগুলো বেশি করে সামনে আনার পরামর্শ দেন শি জিনপিং। এরপর থেকেই সরকারপন্থি গণমাধ্যমগুলোতে এ ধরনের সংবাদের হিড়িক পড়ে যায়। 'সরকারের কাজ'-এ সাহায্যের জন্য করোনাভাইরাসের উৎস হুবেই প্রদেশে নামানো হয় তিন শতাধিক সাংবাদিক। সেই থেকে উহান, লুইয়াং, এমনকি দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংঝৌ শহরেও ভাইরাসবিরোধী লড়াইয়ে কর্মরতদের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো প্রচার হতে থাকে সমান তালে। এ সময় সামনে অন্তঃসত্ত্বা নার্সের দায়িত্ব পালন, স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় জনসেবায় মগ্ন কর্মীর মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলো। কিন্তু মাঠপর্যায়ের বাস্তব অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বোঝাতে নতুন পথ ধরেছে চীন। গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে ভাইরাস আক্রান্ত থেকে সুস্থ হওয়া কয়েকজন ও তাদের চিকিৎসকদের সাক্ষাৎকার নিতে বিদেশি সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানায় জিনপিং সরকার। সেখানে সুস্থ হওয়া এক ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, এই রোগ ততটা ভয়ঙ্কর নয়। আক্রান্ত হলে অবশ্যই দেশ, হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ওপর বিশ্বাস রাখুন। তারা অবশ্যই আপনাকে সুস্থ করে তুলবেন। 'ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন'র পরিচালক স্টিভ স্যাং বলেন, সামান্য সমালোচনার অনুমতি এবং মানবিক গল্পে মনোনিবেশ করার মাধ্যমে তারা মানুষকে আরও বিশদ বিষয় নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত রাখছে। সংবাদসূত্র: বস্নুমবার্গ