করোনার মহামারি

ঘরবন্দি বিশ্ব, স্বাভাবিক হচ্ছে উহান

মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৮ হাজার, আক্রান্ত ৪ লাখ ১৭০ কোটির বেশি মানুষ ঘরবন্দি রাশিয়ায় বয়স্কদের ঘর থেকে বেরোনোতে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনার লাগাম টানায় উহানে প্রশংসায় ভাসছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা
প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের মহামারিতে ঘরবন্দি হয়ে পড়ছে বিশ্বের একের পর এক শহরের বাসিন্দা। তবে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর থেকে এবার আংশিকভাবে 'লকডাউন' তুলে নেওয়া হচ্ছে। চীনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন আগামী ৮ এপ্রিল থেকে তা প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য ভালো থাকলে হুবেই প্রদেশের বাসিন্দারা আজ (বুধবার) মধ্যরাত থেকে ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন। সংবাদসূত্র : সিনহুয়া, রয়টার্স, বিবিসি গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মহামারিতে রুপ নেওয়া এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ওই শহরে কমে এসেছে। গত এক সপ্তাহে সেখানে নতুন করে কেউ আক্রান্ত না হওয়ার পর মঙ্গলবার মাত্র একজনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে লকডাউন এবং বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ এখন করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। এই ভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রায় ১৭০ কোটি মানুষকে ঘরবন্দি থাকার নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) প্রধান ট্রেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস বলেন, 'ভাইরাসটি আগের চেয়ে দ্রম্নতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।' করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মধ্য জানুয়ারি থেকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে চীনের উহান শহর। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে শহর ছাড়া যাবে। চীন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মোট ৮০ জন নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে চার জন বিদেশ থেকে আগতদের সংস্পর্শে আসায় সংক্রমিত হয়েছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৫০ জনে। এছাড়া ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে তিন লাখ ৯৬ হাজার ২১১ জন আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে উঠেছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮ জন। রাশিয়ায় বয়স্কদের ঘর থেকে বেরোনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা এদিকে, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের বাড়িতে থাকার (হোম কোয়ারেন্টিন) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়েছে। শহরটির মেয়র সের্গেই সবিয়ানিন তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই নির্দেশ দিয়েছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের (বয়স ৬৭ বছর) ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। মেয়র বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। তিনি তার কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কেন্দ্রীয়ভাবে যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে রাশিয়ায়, মেয়র তার সদস্যও। তিনি বলেন, 'আপনারা সম্ভবত এটা পছন্দ করবেন না, হয়তো এর বিরোধিতাও করতে পারেন। কিন্তু আমার প্রতি আপনারা আস্থা রাখুন, এই নির্দেশ আপনাদের স্বার্থেই জারি করা হয়েছে।' রাশিয়ায় এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই মস্কোর বাসিন্দা। মেয়র সবিয়ানিন বলেন, 'আগামী ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বয়স্কদের অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।' এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি থাইল্যান্ডে অন্যদিকে, এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে থাইল্যান্ড। আগামী ২৬ মার্চ থেকে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান ওচা। তিনি বলেন, 'জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে লোকজনের চলাচল কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।' করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমিয়ে আনতে আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা পরবর্তী সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।