যুক্তরাষ্ট্রে করোনার হানা

হাজার ছাড়াল মৃতু্য, আক্রান্তও বাড়ছে

মৃতু্যর দিক দিয়ে অবস্থান ষষ্ঠ হলেও আক্রান্তের বিচারে তৃতীয় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিল পাস

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনা আতঙ্কে সুনসান নিউইয়র্ক শহর
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়াল্ডোমিটারের' তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ৫৯৪ জন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ২০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন নার্সসহ ২৮০ জন মারা গেছেন। আর পুরো নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৩ হাজার ৬৭ জন। বিশ্বে করোনায় মৃতু্যর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও আক্রান্তের বিচারে তা তৃতীয়। সংবাদসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি এদিকে, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের একটি সহায়তা বিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়েছে। আইনে পরিণত হলে এটিই হবে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রণোদনা। ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের মধ্যে কয়েক দিনের আলোচনা শেষে বুধবার সিনেটে এ সহায়তা বিল ৯৬-০ ভোটে অনুমোদিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী, এটি এখন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে (প্রতিনিধি পরিষদ) যাবে। সেখানে অনুমোদন পেলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিলটির আইনে পরিণত হওয়ার কথা। করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগ সহায়তার এই বিলে বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিককে নগদ এক হাজার ২০০ ডলার দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে; ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন দিতেও সহায়তা রাখা হয়েছে। দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো; বিশেষ করে স্পেন ও ইতালিতে দাপট দেখানো ভাইরাসটির পরবর্তী কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্র হতে যাচ্ছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করলেও গত কয়েক দিন ধরে ওয়াশিংটনে করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার আলোচনা নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলেছে। নাগরিকদের সুবিধা নিয়ে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান সিনেটরদের মতবিরোধে বুধবারও সহায়তা বিলের ভোট কিছু সময়ের জন্য পিছিয়ে গিয়েছিল। রিপাবলিকান সিনেটর টিম স্কট, রিক স্কট, বেন স্যাসি ও লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, বিলে বেকারদের জন্য বিপুল পরিমাণ সহায়তার প্রস্তাবে কর্মীরা কাজে যাওয়ার চেয়ে বেকার থাকতেই বেশি পছন্দ করতে পারেন। চাকরিজীবীদের চেয়ে বেকারদের জন্য সুবিধা বেশি থাকলে বিলটির বিরোধিতা করবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা। ডেমোক্রেট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, রিপাবলিকানরা তাদের এমন অবস্থান না পাল্টালে তিনিও বিলটির বিরোধিতা করবেন। পরে রিপাবলিকানদের সংশোধনী নিয়ে ভোট হলেও তা পর্যাপ্ত সমর্থন পায়নি। ভোটে ৯৬-০ ব্যবধানে বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পর সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, কোনো সিনেটর বিলটির বিরোধিতা না করায় তিনি 'গর্বিত'। বিলটিকে যুক্তরাষ্ট্রের 'যুদ্ধকালীন সময়ের বিনিয়োগ' হিসেবেও অভিহিত করেছেন তিনি। ডেমোক্রেট সিনেটর চাক শুমার, 'ব্যাপক উত্থান-পতন থাকলেও শেষ পর্যন্ত এর চমৎকার পরিসমাপ্তিই হলো। আমার সবসময়ই বিশ্বাস ছিল যে, আমরা বিলটি পাস করতে পারব, কেননা যুক্তরাষ্ট্র ও এর জনগণ এটি চেয়েছিল।' বিলটির বিস্তারিত না জানা গেলেও দুই পক্ষই এতে কর ছাড়, ঋণ, হাসপাতালের জন্য অর্থ ও করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ধারের বিভিন্ন প্যাকেজে একমত হয়েছেন। আজ (শুক্রবার) কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি নিয়ে ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কংগ্রেস পার হয়ে হোয়াইট হাউসের ডেস্কে আসা মাত্রই বিলটিতে স্বাক্ষরের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার এ বিলে বছরে ৭৫ হাজার ডলার কিংবা তার কম আয় করা নাগরিকদের প্রত্যেককে এক হাজার ২০০ ডলার নগদ অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বিবাহিত যুগল যাদের পারিবারিক আয় দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত তারা পাবেন দুই হাজার ৪০০ ডলার; প্রত্যেক সন্তানের জন্য মিলবে অতিরিক্ত আরও ৫০০ ডলার করে। প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্রেট স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, তার কক্ষে বিলটি কণ্ঠভোটেই পাস হবে বলে তিনি আশা করছেন। এর ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা যারা স্বেচ্ছায় আইসোলেশনে আছেন তাদের বাইরে থেকেই বিলের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান জানানোর সুযোগ মিলবে। তবে নিম্নকক্ষের সদস্যদের কোনো একজনও যদি এ প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানান, তাহলে ওয়াশিংটনের কংগ্রেস কক্ষেই ভোট হবে।