করোনাভাইরাস

তথ্য গোপন করছে ইরান!

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মাস্ক পরা কয়েকজন ইরানি
করোনাভাইরাসে মৃতু্যর মিছিল শুরু চীনের উহান থেকে, শেষটা কোথায় হবে জানা নেই কারও। একে একে বিশ্বের ১৯২টি দেশে ছড়িয়েছে এ ভাইরাস। সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে ইরানে, কিন্তু বিষয়টি ইরান সরকার গোপন করছে এমটাই দাবি করেছে দেশটির জনগণ। ইরানের জনগণের মধ্যে প্রবল ধারণা, সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই ভাইরাসে গণসংক্রমণের পর ইরানে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের গিলানের একটি হাসপাতালে মোহাম্মদ নামে এক চিকিৎসক টানা কাজ করেছিলেন। ১৪ দিনেও নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়নি তার। সেই হাসপাতালে তার বন্ধুর বাবা ও সহকর্মীরা মারা গেছেন। এমনকি তার মেডিক্যাল স্কুলের সাবেক শিক্ষকও করোনার একজন ভুক্তভোগী। মোহাম্মদের ভাষ্যমতে, 'করোনাভাইরাস শুধু নির্দিষ্ট কোনো হাসপাতাল না, বরং পুরো ব্যবস্থাকে স্থবির করে দিয়েছে। কর্মীদের উদ্যম কমতির দিকে, পরিবার চিন্তিত এবং আমাদের প্রচন্ড চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।' ইরানে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিলে তার ফল হিসেবে গ্রেপ্তার পর্যন্ত হতে পারেন মোহাম্মদ, তাই তার নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। গিলানের আরও অনেক চিকিৎসক তাদের শোচনীয় অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন সাংবাদিকদের। তারা মনে করেন, সরকার খুব খারাপ পন্থায় এই সংকট মোকাবিলা করেছে। মোহাম্মদ নামে ওই চিকিৎসক বলেন, 'আমাদের মেডিক্যালের কর্মীরা প্রতিদিন মারা যাচ্ছে, আমাদের পর্যাপ্ত মাস্ক নেই। আমি জানি না কত মানুষ মারা গেছে। কিন্তু সরকার নিশ্চিতভাবেই এই সংকটের মাত্রা কমিয়ে বলছে। তারা সংক্রমণের শুরু থেকেই মিথ্যা বলছে।' ইরানের ৩১টি প্রদেশে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ ছড়াতে সময় নিয়েছে মাত্র ১৬ দিন। ১৬টি দেশ দাবি করেছে, তারা এমন ব্যক্তি পেয়েছে, যার ভাইরাস সংক্রমণ ইরানে হয়েছিল। ইরাক, আফগানিস্তান, বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, পাকিস্তান, জর্জিয়া, এস্তোনিয়া, নিউজিল্যান্ড, বেলারুশ, আজারবাইজান, কাতার ও আর্মেনিয়া এই দাবি করেছে। এদিকে, ইরানের সরকার শুরু থেকেই এই সংক্রমণের মাত্রা অস্বীকার করে আসছে বলে দাবি করেন দেশটির সরকারের সমালোচকরা। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি ১৯ ফেব্রম্নয়ারি প্রথমবার ঘোষণা দেন, করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই, এটা নিয়ে ইরানের শত্রম্নরা বাড়িয়ে বলছে। এক সপ্তাহ পর ইরানে সংক্রমণ ও মৃতু্য যখন বাড়তে থাকে, তখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান রুহানি একই কথা আবারও বলেন, এটা ষড়যন্ত্র ও শত্রম্নদের ভীতি দেখানোর একটা কৌশল। তিনি বলেন, দেশকে স্থবির করতে এই নকশা করা হয়েছে। ইরানিদের দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করার পরামর্শ দেন তিনি। সম্প্রতি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয় করোনাভাইরাস হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা 'জৈব অস্ত্র'। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার টুইটে লেখেন, 'বায়োলোজিকাল অ্যাটাক'। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মার্চের ২০ তারিখ ইরানে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০০ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজারে। গিলান, গোলেস্তান এবং মাজারদার্ন ইরানের তিনটি সবচেয়ে সংকটময় প্রদেশ। এসব জায়গার চিকিৎসকরা জানান, করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট এবং অন্যান্য মেডিকেল সামগ্রী খুবই সীমিত সংখ্যায় দেয়া হয়েছে। সাধারণ ওষুধ, অক্সিজেন ট্যাংক, মাস্ক এবং রক্ষাকারী গস্নাভসও সংখ্যায় কম সেখানে। ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন। শিয়া মুসলমানদের জন্য কোমের আলাদা তাৎপর্য আছে। দেশটির উচ্চসারির ইসলামী নেতাদের জন্য এই জায়গাটা তীর্থস্থান। এখানে দুই কোটি ঘরোয়া ও ২৫ লাখ আন্তর্জাতিক পর্যটক যান। অনেক ধর্মীয় স্থান আছে, যেখানে ধার্মিকরা সম্মান দেখানোর জন্য চুমু খান ও স্পর্শ করে থাকেন। সেখান থেকে ভাইরাসটি দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এই শহরটিতে কোনো কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা না নিয়ে মোহাম্মদ সাইদের মতো ইসলামিক গুরু আরও বেশি মানুষকে আমন্ত্রণ জানান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কার্যপরিচালনা বিভাগের পরিচালক রিচার্ড ব্রেনান ইরান ঘুরে এসে জানান, কোম শহরের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ইরানের ভেতর ও বাইরের বহু মানুষ এখানে যাওয়া আসা করছে। এভাবে দ্রম্নত পুরো ইরানে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ