সায় ডবিস্নউএইচওর

সামাজিক নয়, শারীরিক দূরত্ব বলার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশ | ২৯ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মারাত্মক ধরনের ছোঁয়াচে। এজন্য প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব (সোশ্যাল ডিসট্যান্স) বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা। তবে এই শব্দযুগল ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছেন জনসংযোগ এবং মনস্তাত্ত্বিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি তাদের ভাষ্য, 'সামাজিক দূরত্ব বললে যতটা দূরে সরিয়ে দেওয়ার ভাব ফুটে ওঠে, তা অনেকের মনেই ধাক্কা লাগতে পারে। তাই 'সোশ্যাল ডিসট্যান্স' না বলে 'ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স' বা 'শারীরিক দূরত্ব' বলাই শ্রেয়। এতে সাধারণ মানুষ সঠিক বার্তা পাবে। তা মেনে চলতেও তাদের কোনো সমস্যা হবে না।' যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ-ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের এই প্রস্তাবের গুরুত্ব বুঝে তা মেনে নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। তাই নতুন শব্দ দুটি এ রকম হতে পারে, 'সামাজিক যোগাযোগের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা'। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'সামাজিক দূরত্ব' কথা বললেই যেন অস্পৃশ্যতার ছায়া ভেসে ওঠে। জাতি-বর্ণ-ধর্মের মধ্যে ফারাকের সেই মধ্যযুগীয় ধারণা যেন উসকে দেয় এই শব্দযুগল। বিশেষ করে সামান্য অসুস্থ রোগীর থেকে ছিটকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা তাদের মনে একটা বিচ্ছিন্নতার বেদনাবোধ তৈরি করে। এতে অসুস্থ বা সামান্য অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হবে। এমনকি করোনা সন্দেহে কোয়ারেন্টিনে থাকা বা হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে ভুল বার্তা দেওয়া হবে। আমেরিকান নর্থ-ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল আল্ডরিখের মতে, এই 'সামাজিক দূরত্ব'র অর্থ অনেকাংশে ভুল হতে পারে। মনে হতে পারে, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হচ্ছে। তার চেয়ে ব্যাপারটা এভাবে ভাবলে ভালো হয়- সামাজিক যোগাযোগ রাখতে কোনো বাধা নেই, স্রেফ শারীরিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে কয়েকটা দিন। তিনি বলেন, 'এই সংকটের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ সংক্রান্ত যে কোনো শব্দই খুব স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে উঠছে। গবেষণায় দেখছি, এর ফলে মানুষজনের মধ্যকার স্বাভাবিক টান আলগা হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো অনেকে আচরণ করছে। এই সময়টা যুদ্ধ পরিস্থিতির চেয়ে কিছু কম ভয়াবহ নয় ঠিকই। কিন্তু এখানে তো কোনো মানুষ একে অন্যের শত্রম্নপক্ষ নয়।' আল্ডরিখের উদ্বেগ বিশেষ করে বয়স্কদের নিয়ে। কারণ, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (সোশ্যাল মিডিয়া) সঙ্গে সেভাবে যুক্ত নন। তাদের কাছে জনসংযোগ মানেই সরাসরি দেখা করা, কথা বলা। ফলে তাদের কাছে 'সামাজিক দূরত্ব' শব্দটাই অনেকটা ধাক্কার। তার এই বক্তব্য যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেছেন ডাবিস্নউএইচওর কর্তাব্যক্তিরা। তারা সবাই একবাক্যে 'সামাজিক দূরত্ব' শব্দটিকে সরিয়ে 'শারীরিক দূরত্ব' কথাটি চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও সেই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।