যুক্তরাজ্যে করোনার বিস্তার

পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে :বরিস

নাগরিকদের চিঠি পাঠিয়ে সতর্কবার্তা দিলেন তিনি দেশটিতে মৃত বেড়ে ১ হাজার ২৩৫, আক্রান্ত ১৯ হাজার ৫২২ জন

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংকট 'ভালো হওয়ার আগেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে' বলে সতর্ক করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে চিঠি পাঠিয়ে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রয়োজনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে বলেও ওই চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র :বিবিসি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর থেকে তিনি নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছেন। ওই চিঠির সঙ্গে প্রত্যেক ব্রিটিশ নাগরিককে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত সরকারি নিয়মকানুন এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যসংবলিত লিফলেটও দেওয়া হয়েছে। সরকারি পরামর্শের স্পষ্টতা নিয়ে সমালোচনার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যে শনিবার আরও ২৬০ জন করোনায় মারা যাওয়ায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা এখন এক হাজার ১৯ জনে পৌঁছেছে। পাশাপাশি আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৮৯ জন। দেশটির প্রায় তিন কোটি পরিবারকে ওই চিঠি পাঠাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫৮ লাখ পাউন্ড। চিঠিতে বরিস লিখেছেন, 'শুরু থেকেই আমরা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করেছি। বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা পরামর্শে আমাদের কিছু করতে বললে, আমরা তা অবশ্যই করব।' চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'আমরা জানি পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে আরও খারাপের দিকে যাবে। তবে আমরা সঠিক প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং সবাই যত বেশি নিয়ম মেনে চলব, তত কম জীবন হারাব এবং তত তাড়াতাড়ি জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।' করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং দৈনন্দিন জীবনে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর প্রভাব পড়ার আগেই সামনের দুই থেকে তিন সপ্তাহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বরিসও তার চিঠিতে মহামারিকে 'জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি' হিসেবে উলেস্নখ করেছেন এবং জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা রক্ষা করতে এবং জীবন বাঁচাতে সবাইকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছেন। তিনি চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য সেবাদানকারীর পাশাপাশি সেসব লাখ লাখ মানুষ, যারা অসহায় মানুষের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের কাজের প্রশংসা করেছেন। চিঠির সঙ্গে পাঠানো লিফলেটটিতে হাত ধোয়া সম্পর্কিত দিকনির্দেশনা, করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলোর ব্যাখ্যা, বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সরকারি নিয়ম এবং অসহায় মানুষের সহায়তা করা সংক্রান্ত নানা পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে ঘরে থাকতে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো কার্যকর করতে পাঁচ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে নতুন এই ক্ষমতা কার্যকর করা হয়। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ নিয়ম না মানলে ৯৬০ পাউন্ড জরিমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চিঠি নিয়ে ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার মেডিকেল পরিচালক বলেন, ভাইরাসটি নিয়ে এখনো দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়ার সময় আসেনি। সরকারের নিয়মিত করোনাভাইরাস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক স্টিফেন পাওস বলেন, 'যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে রাখতে আমাদের প্রত্যেকেই ভূমিকা পালন করেছে।' এছাড়া দেশটির ব্যবসাবিষয়ক সচিব অলোক শর্মাও ঘোষণা করেছেন, ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাস সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় তাদের জন্য নীতি-বিধি পরিবর্তন করা হবে। পাশাপাশি সামনের সারিতে কাজ করা কর্মীদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, ইংল্যান্ডের হাসপাতাল কর্মীদের করোনাভাইরাস রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে। ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে স্বাস্থ্যকর্মীদের এরই মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে। আজ (সোমবার) থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে এই পরীক্ষা শুরু হবে। স্কটল্যান্ডের নেতা অ্যালিস্টার জ্যাকের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাস ধরা পড়ায় তিনি নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন। তার শরীরে কোভিড-১৯ এর মৃদু লক্ষণগুলো দেখা গেছে। এই মহামারির সময় মানুষ কীভাবে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবে, সে সম্পর্কে হেলথ ইংল্যান্ড ইনিশিয়েটিভের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন কেমব্রিজের ডিউক এবং ডাচেস। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের চাহিদা মেটাতে লন্ডনের এক্সেল সেন্টারে যে অস্থায়ী হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে, সেজন্য সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন ৭৫০ জনের বেশি অ্যাম্বুলেন্স স্বেচ্ছাসেবকরা।