ক্ষমা চাইলেন মোদি
ভারতে কঠোর লকডাউনে লাখো মানুষ আটকা-অনাহারে
কঠোর সিদ্ধান্তের জন্য জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী তিনি বাড়ি ফিরতে গিয়ে পথেই দিনমজুরের মৃতু্য
প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
মাত্র চার ঘণ্টারও কম সময়ের নোটিশে ভারতের ১৩০ কোটি লোককে তিন সপ্তাহের 'লকডাউনে (অবরুদ্ধ) থাকার নির্দেশে দেশটির লাখো মানুষ বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে অনাহারে রয়েছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে এ পদক্ষেপকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির সরকার। কিন্তু এ পদক্ষেপের ফলে দেশটির লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের হাতে চলার মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যানুযায়ী, রোববার পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং মৃতু্য হয়েছে অন্তত ২৫ জনের। কিন্তু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন করোনাভাইরাস পরীক্ষার হার যে দেশগুলোতে, ভারত তার অন্যতম। তবে দেশটি পরীক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা আছে। সরকারের নেওয়া 'পুরোপুরি লকডাউন' পদক্ষেপে বাড়ি থেকে লোকজনের বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জরুরি নয়, এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রাখার পাশাপাশি সব ধরনের জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সরকারের এসব পদক্ষেপের পর দিলিস্নর মতো বড় শহরগুলো থেকে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিক তাদের গ্রামের বাড়ির পথে রওনা দেয়। সব ধরনের পরিবহণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। মহারাষ্ট্রের একজন দিনমজুর টানা দুই দিন শুধু পানি খেয়ে ১৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। শনিবার আরেক ঘটনায় হেঁটে ২৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাড়িতে ফিরতে গিয়ে আরেক দিনমজুরের মৃতু্য হয়েছে।
দেশটির সব সড়ক-মহাসড়ক যখন সুনসান, তখন দিলিস্নর আনন্দবিহার বাস টার্মিনালে অন্য প্রদেশ থেকে আসা হাজার হাজার দিনমজুর আটকা পড়েছেন। তিন কিলোমিটার লম্বা লাইন করে তারা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু শনিবার রাত পর্যন্ত বেশির ভাগেরই বাড়িতে ফেরার কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
লকডাউনের কারণে দিলিস্নর সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বেশির ভাগ অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ ছুটে গেছে। কাজ না থাকায় খাবার জোগাড় করার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ নিজের গ্রামের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করছে।
এদিকে তিন সপ্তাহের লকডাউনে শহরগুলোতে আটকা পড়া হাজার হাজার দিনমজুর বেপরোয়া হয়ে নিজ নিজ গ্রামে ফেরার চেষ্টায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে 'কঠোর সিদ্ধান্তের' জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
রোববার স্থানীয় সময় সকালে মাসিক রেডিও বক্তৃতা 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, 'আমার গ্রহণ করা কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে অসুবিধার কারণ হওয়ায় আমি জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আপনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই আমাকে এ পদক্ষেপগুলো নিতে হয়েছে।' বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে গত সোমবার মোদি ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন। তারপর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ভারতে সব ধরনের গণপরিবহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, জিম, সুইমিংপুল বন্ধ রয়েছে।