ভয়াবহ অবস্থার আশঙ্কা

করোনার ছোবলে যুক্তরাষ্ট্রে দুই দিনে দ্বিগুণ মৃতু্য

দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি, মৃতু্য ২ হাজার ২৩১ জনের বেশি মৃতু্যপুরী নিউইয়র্ক, তারপরও কোয়ারেন্টিনে 'না' ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শিশুর মৃতু্য

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুত্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের ছোবলে সঙ্গীন হয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক। গত এক সপ্তাহে সেখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটেছে। এরই মধ্যে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি, দ্রম্নত বাড়ছে মৃতু্যর ঘটনাও। মাত্র দুই দিনের ব্যবধানেই দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও সেখানে মৃতের সংখ্যা এক হাজারের মতো ছিল। কিন্তু শনিবার এসে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজারের বেশি। সংবাদসূত্র : ডেইলি মেইল, রয়টার্স আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ২৩ হাজারের বেশি। মৃতের সংখ্যা দুই হাজার ২৫০ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৩ হাজার ৫১০ জন নিউইয়র্কের। শহরটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২২২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৬৭২ জন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারিতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন 'ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্কুল অব মেডিসিন'র এক উপাত্ত বিশ্লেষক (ডেটা অ্যানালিস্ট)। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আগামী জুন মাস পর্যন্ত করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ চলতে পারে। এতে মারা যেতে পারে অন্তত ৮১ হাজার মানুষ। এদিকে, নিউইয়র্কে শনিবার দুই শতাধিক মানুষের মৃতু্য সত্ত্বেও শহরটিকে কোয়ারেন্টিনে (সঙ্গরোধ) রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগে ট্রাম্প আভাস দিয়েছিলেন, কোভিড-১৯ এর বিস্তার কমাতে গোটা নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটের কিছু অংশ কোয়ারেন্টিন করা হতে পারে। কিন্ত এখন তিনি বলছেন, নিউইয়র্ককে কোয়ারেন্টিনে রাখার প্রয়োজন পড়বে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিউইয়র্কে। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্কে কোয়ারেন্টিন আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। সে সময় তিনি বলেন, 'এখানে কোয়ারেন্টিন আরোপ করা হলে ভালো হবে, কারণ এটি হটস্পট। আমি এ নিয়ে ভাবছি।' ট্রাম্প তখন আরও জানিয়েছিলেন, নিউইয়র্ক থেকে যেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যগুলোতে করোনা ছড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্পের সেই অবস্থানের সঙ্গে একমত হননি নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। তার দাবি, এ ধরনের পদক্ষেপ ভ্রান্তি তৈরি করবে এবং তা আমেরিকানবিরোধী সিদ্ধান্ত। নিউইয়র্কে এমনিতেই কোয়ারেন্টিনমূলক পদক্ষেপ চলছে, সেখানে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা আছে, জনগণকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বেশি পদক্ষেপ নিলে তা লকডাউনের মতো অবস্থা হয়ে যাবে। এতে আর্থিক খাত অচল হয়ে পড়বে। এর পরপরই এক টুইটার পোস্টে ট্রাম্প বলেন, নিউইয়র্ককে কোয়ারেন্টিনে নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, 'কোয়ারেন্টিনের বদলে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও কানেকটিকাটে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করবে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।' হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী, নিউইয়র্ককে কোয়ারেন্টিনে না নেওয়ার নতুন এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের টুইটের পর একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে সিডিসি। সেখানে তিন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের ১৪ দিনের জন্য সব ধরনের অনত্যাবশ্যকীয় অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারাগারে আতঙ্ক :কয়েক হাজার বন্দির মুক্তি এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাসের দ্রম্নত বিস্তারের মুখে কয়েক হাজার কারাবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন শীর্ষে। ঝুঁকির মুখে রয়েছে সেখানকার কারাগারগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ২০টি কারাগার যেসব শহর ও কাউন্টিতে অবস্থিত, সম্প্রতি সেগুলোর ওপর জরিপ চালিয়েছে রয়টার্স। এতে দেখা গেছে, গত ২২ মার্চ থেকে ২২৬ কয়েদি ও ১৩১ জন স্টাফ নিশ্চিতভাবে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি বিচারপতি, পাবলিক ডিফেন্ডার, প্রসিকিউটর ও কখনো কখনো রাজনৈতিক আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়। নিউ জার্সির প্রধান বিচারপতি কারাগারে মৃতু্য ঠেকাতে রাজ্যজুড়ে এক হাজার বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে গত সপ্তাহ থেকে প্রায় ৪৫০ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে নিউইয়র্ক সিটির কর্তৃপক্ষ। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম শিশুর মৃতু্য এদিকে, মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম একটি শিশুর মৃতু্য হয়েছে। শনিবার দেশটির ইলিনয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শিকাগোতে মৃত শিশুটির বয়স এক বছরের কম। মৃতু্যর আগেই তার শরীরে কোভিড-১৯ ধরা পড়েছিল।