করোনাভাইরাস

মহামারির উৎস প্যাঙ্গোলিন!

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই
প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই নামে একটি প্রাণী, যা চোরাইপথে চীনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা হয়; তার দেহে এমন একটি ভাইরাস পাওয়া গেছে, যা কোভিড-১৯ এর সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।' প্যাঙ্গোলিন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চোরাইপথে পাচার হওয়া স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটা খাদ্য হিসেবে যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ব্যবহৃত হয় ঐতিহ্যবাহী ওষুধ তৈরির জন্য। ঐতিহ্যবাহী চীনা ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের গায়ের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং তাদের মাংসও চীনে একটি উপাদেয় খাবার বলে গণ্য করা হয়। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. টমি ল্যাম বলেছেন, চীনে পাচার হওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনের মধ্যে এমন দুই ধরনের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে, যা মানুষের মধ্যে দেখা দেয়া মহামারির সঙ্গে সম্পর্কিত। বিজ্ঞান-বিষয়ক 'নেচার' সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এসব প্রাণী নিয়ে নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে করোনাভাইরাসের মতো কোনো মারাত্মক রোগ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমাতে হলে বুনো প্রাণীর বাজারে প্যাঙ্গোলিনের মতো জন্তু বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত। তারা এটাও বলেছেন, মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির ক্ষেত্রে প্যাঙ্গোলিনের ভূমিকা বুঝতে হলে আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন। ড. ল্যাম বলেন, যদিও সার্স-কোভ-টু-র প্রাদুর্ভাবের সরাসরি 'হোস্ট' হিসেবে প্যাঙ্গোলিনের ভূমিকা আরও নিশ্চিত হওয়ার দরকার আছে, তবে ভবিষ্যতে যদি এ রকম প্রাণী থেকে মানুষে মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে হয়, তাহলে বাজারে এসব প্রাণীর বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।' বিজ্ঞানীরা বলেছেন, বাদুড়ের দেহেও করোনাভাইরাস আছে এবং তার সঙ্গে মানুষের দেহে সংক্রমিত ভাইরাসের আরও বেশি মিল আছে। কিন্তু একটি অংশ, যা মানুষের দেহের কোষ ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে ভাইরাসটিকে সহায়তা করে, তার সঙ্গে এর মিল নেই। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-গবেষক অধ্যাপক এডওয়ার্ড হোমস বলেন, এর অর্থ হলো, বন্যপ্রাণীদের মধ্যে এমন ভাইরাস আছে, যা মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষেত্রে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়ের নিশ্চয়ই সম্পর্ক আছে, হয়তো প্যাঙ্গোলিনও সম্পর্কিত, তবে অন্য কোনো প্রাণীর জড়িত থাকারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে।' ঠিক কীভাবে ভাইরাসটি একটি জন্তুর দেহ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি প্রাণীর দেহে এবং এরপর সেখান থেকে মানুষের দেহে ঢুকলো, সেটা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে। খুব সম্ভবত 'হর্সশু' প্রজাতির বাদুড় এবং প্যাঙ্গোলিন- দুই ধরনের প্রাণীই এতে জড়িত। কিন্তু এর ঘটনাক্রম এখনো অজানা। ডা. ল্যাম বলেছেন, চোরাইপথে যাওয়া মালয়ান প্যাঙ্গোলিনে এই ভাইরাস পাওয়া যাওয়ার পর এই প্রশ্নটাও উঠছে যে, এই প্যাঙ্গোলিনের দেহেই বা ভাইরাস ঢুকলো কীভাবে? সেটা কি পাচারের সময় আশপাশে থাকা বাদুড় থেকে এসেছিল, নাকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের যে প্রাকৃতিক আবাসস্থল, সেখানেই ঘটেছিল? প্রাণী সংরক্ষণবিদরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, অবৈধ বন্যপ্রাণী পাচার রোধের জন্য সরকারগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করা। চীন অবশ্য কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর বন্যপ্রাণীর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ভিয়েতনামেও এমন কিছু পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। লন্ডনের 'জুলজিক্যাল সোসাইটি'র অধ্যাপক অ্যান্ড্রু কানিংহ্যাম বলেছেন, এই গবেষণাপত্র থেকে একলাফে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া ঠিক হবে না। তার কথায়, কোভিড-১৯ এর উৎস আসলে এখনো অজানা। হয়তো এটা কোনো প্রাকৃতিক প্যাঙ্গোলিন ভাইরাসই ছিল, বা হয়তো প্যাঙ্গোলিন ধরা এবং হত্যা করার সময় অন্য কোনো প্রাণী থেকে এসেছিল। চীনের উহান শহর থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর এ জন্য সামুদ্রিক প্রাণী থেকে শুরু করে সাপ ও বাদুড়কে সন্দেহ করা হচ্ছিল। চীনের একদল গবেষক মনে করছে, সামুদ্রিক প্রাণী কিংবা সাপ-বাদুড় নয়, করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্যাঙ্গোলিন বা বনরুই থেকে। এক হাজারের বেশি বন্যপ্রাণীর নমুনা পরীক্ষা করার পর গবেষকরা এমন অভিমত দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ