যুক্তরাষ্ট্রে করোনা

এক লাখের বেশি মানুষ মারা যেতে পারে :ট্রাম্প

দুই লাখ মানুষের মৃতু্যর আশঙ্কা টাস্কফোর্সের প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃতু্য হচ্ছে নিউইয়র্কে

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য এক লাখ বা তারও বেশি হতে পারে বলে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প একথা বলেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে দুই লাখ মানুষের মৃতু্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ'র পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি করা মডেল অনুযায়ী, রোববার সিএনএন-এর 'স্টেট অব দি ইউনিয়ন' শীর্ষক টক শোতে এমন আভাস দিয়েছেন তিনি। ফাউসির আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখের বেশি মানুষের শরীরে করোনার সংক্রমণ হতে পারে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও 'স্টে অ্যাট হোম' গাইডলাইন আরও ৩০ দিন বাড়িয়ে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। দুই সপ্তাহ আগে ১৫ দিনের জন্য এ গাইডলাইন ঘোষণা করেছিলেন তিনি, যার মধ্যে গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোমবার ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা ছিল। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ১২ এপ্রিলের ইস্টারের পরবের সময় দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এদিনের সংবাদ সম্মেলনে আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। ট্রাম্প জানান, কোভিড-১৯ এ সম্ভাব্য মৃতু্যর সংখ্যা সম্পর্কে রোববার 'সবচেয়ে সঠিক' ও 'বিশদ' তদন্ত ও বিশ্লেষণ প্রতিবেদন পেয়েছেন। তিনি জানান, 'যদি আমরা কিছু না করি' তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ট্রাম্প বলেন, 'দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃতু্যর সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। বিজয় অর্জিত হওয়ার আগেই জয় ঘোষণার চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। আপনারা যত ভালো করবেন, তত দ্রম্নত এই দুঃস্বপ্ন শেষ হবে।' করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ মানুষের মৃতু্যর আশঙ্কা তবে দেশটির 'ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ'র পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯-এ দুই লাখ মানুষের মৃতু্য হতে পারে। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস টাস্কফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিয়োজিত আছেন ফাউসি। ফাউসি বলেন, 'রোগ বিশ্লেষণমূলক মডেলগুলোতে সবচেয়ে খারাপ ও সবচেয়ে ভালো চিত্রটি উঠে আসে। বাস্তবতা থাকে মাঝামাঝি পর্যায়ে। আমি কখনোই কোনো রোগের এমন মডেল দেখিনি, যাতে সবচেয়ে খারাপ ফলটি এসেছে। তা সবসময় সর্বোচ্চ সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। আমি বোঝাতে চাইছি, আমরা এখন যা দেখছি, তার ভিত্তিতে বলতে চাই, মৃতু্যর সংখ্যা দুই লাখ পর্যন্ত হতে পারে। তবে আমি এ হিসাবকে চূড়ান্ত বলে ধরে নিতে চাই না।' এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮১ হাজার মানুষের মৃতু্যর আশঙ্কা জানিয়েছিলেন 'ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়'র গবেষকরা। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। জুন মাসের পর থেকে ভাইরাসটির প্রকোপ কমতে শুরু করলেও জুলাই মাসের শেষ নাগাদ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃতু্য হতে থাকবে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালের ওপর চাপ বাড়বে। মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটরেরও সংকট দেখা দিতে পারে। সবেচেয়ে বেশি উপদ্রম্নত নিউইয়র্কে এখনই ভেন্টিলেটরের টান পড়ছে। প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃতু্য হচ্ছে নিউইয়র্কে বর্তমানে করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতু্য হচ্ছে নিউইয়র্কে। এক হিসাবে দেখা গেছে, নিউইয়র্কে প্রতি ৯ মিনিটে একজনের মৃতু্য হচ্ছে। গত ১ মার্চ নিউইয়র্কে ইরানফেরত একজন প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়। এর দুদিন পরই সেখানে দ্বিতীয় আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকেই ওই অঙ্গরাজ্যে দ্রম্নতগতিতে করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে ওই অঙ্গরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতু্যর সংখ্যা বাড়ছেই। সেখানে মৃতু্যর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আর পুরো যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। আর মৃতু্যর সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ফলে করোনার 'হটস্পট' হিসেবে নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি এবং কানেক্টিকাটের কথা উলেস্নখ করে ওই তিন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল সরকার।