করোনা মহামারি

যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্য ৩ হাজার ছাড়াল

আক্রান্ত ১ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতু্য ৩ হাজার ১৭৮ জনের করোনার সুনামি থেকে নিস্তার নেই :নিউইয়র্কের গভর্নর প্রথম মার্কিন সেনার মৃতু্য

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইউরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রে মরণ কামড় বসিয়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে লাশের সারি প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে এ সময়ে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্তদের পাশে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের এক মুহূর্তও ভোলেনি সাধারণ মার্কিনিরা। তাই সড়ক-মহাসড়কে 'ধন্যবাদ আমাদের হিরোরা' লিখে সম্মান জানাচ্ছে সেই সব সাহসী চিকিৎসাকর্মীকে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি অঙ্গরাজ্য থেকে তোলা ছবি -এপি/আউটলুক ইনডিয়া
বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে মৃতু্যর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে এবং মৃতু্যর সংখ্যা তিন হাজার ১৭৮। একই সময়ে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪ হাজারের বেশি। পাশাপাশি মারা গেছে ৩৯ হাজারের বেশি। এছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৪৩৫ জন। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন এদিকে, শুধু সোমবারই যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৫০২ জনের মৃতু্য হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্যর ঘটনা এটি। করোনাভাইরাসে দেশটির হাওয়াই ও ওয়াইওমিং অঙ্গরাজ্য থেকে এ পর্যন্ত কোনো মৃতু্যর খবর আসেনি। বাকি সব অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে, সেখানে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে এক হাজার পার হয়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ কোটি ৬০ লাখ ৮ হাজার ৩১৮ জন বাসিন্দা 'স্টে অ্যাট হোম' নির্দেশের আওতায় ঘরবন্দি ছিলেন। সংখ্যাটি দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি বু্যরোর হিসাব অনুযায়ী দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৮২ লাখ ৩৯ হাজার ৫২৩ জন। করোনার সুনামি থেকে কারও নিস্তার নেই :কুমো এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিউইয়র্ক। এই অঙ্গরাজ্যে মৃতু্য হয়েছে এক হাজার ২১৮ জনের। করোনা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা স্বেচ্ছাসেবী পাঠানোর আকুল আবেদন জানিয়েছেন অঞ্চলটির গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। তার মতে, মার্কিনিদের জন্য ধেয়ে আসছে 'করোনা সুনামি'। নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কুমোর। সবার সাহায্য চেয়ে সোমবার তিনি বলেন, 'দয়া করে নিউইয়র্কে আসুন, আমাদের বাঁচান। আমাদের সাহায্য দরকার।' কুমোর এই আবেদনের দিনে নৌবাহিনীর জাহাজ 'ইউএসএনএস কমফোটর্' পৌঁছেছে রাজ্যটির বন্দরে। করোনায় নিউইয়র্কে সব হাসপাতাল ভরে যাওয়ায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত নয়, এমন রোগীদের চিকিৎসা হবে ১০০ শয্যার এই জাহাজে। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা নিয়ে নিউইয়র্ক গভর্নর বলেন, 'ডেট্রয়েট হোক, আর নিউ ওরলিন্স, এটা (করোনা) তার মতো করে কাজ করে যাবে পুরো দেশে।' করোনা সবচেয়ে ভয়ানক থাবা বসিয়েছে ইতালি ও স্পেনে। কিন্তু এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্র। অবসর থেকে ফিরে এসে নার্স ও অন্য চিকিৎসাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন। কারও প্রচেষ্টার কমতি নেই। তারপরও সামনে ভয়াবহ সময় আসছে বলে কুমো সতর্ক করে বলেন, 'আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এই ভাইরাস পুরো রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, এমনকি পুরো দেশে। কোনো মার্কিনি এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে না। সুনামি আসছে।' করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধে অনুমতি যুক্তরাষ্ট্রে অন্যদিকে, হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে দুটি ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যেসব ওষুধ সাধারণত ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কোনো ওষুধ ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা 'ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' (এফডিএ) সোমবার ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের বিষয়ে এই অনুমোদন দেয়। এ দুটি ওষুধ কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় বৈপস্নবিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে বলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারণা। যদিও কোভিড-১৯ নিরাময়ে এসব ওষুধের কার্যকরিতা নিয়ে এখনো তেমন কোনো বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ মেলেনি। প্রথম মার্কিন সেনার মৃতু্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম কোনো মার্কিন সেনা সদস্যের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার ওই সেনা কর্মকর্তার নাম ডগলাস লিন হিককক। নিউ জার্সি আর্মি ন্যাশনাল গার্ডসম্যানের সদস্য ছিলেন তিনি। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২১ মার্চ তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার এক বিবৃতিতে বলেন, 'আজকে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য একটি বেদনাদায়ক দিন। আমরা করোনায় প্রথমবারের মতো কোনও মার্কিন সেনাসদস্যকে হারালাম। এটি আমাদের সামরিক বাহিনীর জন্য বড় ক্ষতি।'