বিপাকে শতকোটি মানুষ

পরিকল্পনাহীন লকডাউনে ছন্নছাড়া ভারত

দিনমজুর, গৃহহীন ও রোগে ভোগাদের অবস্থা শোচনীয় কড়া সমালোচনার মুখে মোদি সরকার

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
অপরিকল্পিত লকডাউনে বিপাকে পড়েছে ভারতের শত কোটি মানুষ। বিশেষ করে, দিনমজুর-গৃহহীন ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। গ্রামে ফিরে যেতে না পেরে মঙ্গলবার দিলিস্নর রেললাইনের পাশেই শুয়ে পড়েছে একদল খেটে খাওয়া মানুষ -পিটিআই/আউটলুক ইনডিয়া
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করায় এখন ছন্নছাড়া অবস্থায় ভারত। অনেকটা হুট করেই এ নির্দেশনা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশটির শত কোটি মানুষ। বিশেষ করে দিনমজুর, গৃহহীন ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুক্তভোগীদের অবস্থা খুবই করুণ। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া দেশ লকডাউন করায় মোদি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেকেই। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, আল-জাজিরা গত ১০ দিনের মধ্যে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দু'বার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যে একবারও মানুষজন তাদের জরুরি চাহিদা কীভাবে মেটাবে তা পরিষ্কার করেননি তিনি। সপ্তাহখানেক ধরেই ভারতে পথচারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া, যানবাহনের টায়ার ফুটো করে দেওয়ার অসংখ্য ছবি ও ভিডিও দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কিন্তু কলকারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় শহরগুলোতে আটকা পড়া লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের নিত্যপণ্যের জোগান বা ঘরে ফেরার বিষয়ে কোনো সুব্যবস্থা করা হয়নি। এ কারণে গাড়িঘোড়া না থাকায় বহু মানুষ শত শত কিলোমিটার হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রদেশে এমন এক অভিবাসী কর্মীর মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। রণবীর সিং নামে ওই ব্যক্তি দিলিস্নর একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন। লকডাউনের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন তিনি। গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছিলেন। কিন্তু ২০০ কিলোমিটার যাওয়ার পরেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যান রণবীর এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চরম দুর্দশা এইচআইভি (এইডস) আক্রান্তদের জন্যও। ২০১৭ সালের হিসাবে, বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ এইডস আক্রান্ত দেশ ভারত। সেখানে অন্তত দুই কোটি ১৪ লাখ এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই নিম্নবিত্ত এবং নিয়মিত সরকারি হাসপাতালে গিয়ে 'অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি' (এআরটি) নেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন থেরাপি নিতে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। ভারতের সরকারি হিসাবে, দেশটির প্রায় ছয় থেকে আট শতাংশ মানুষ বিরল ও জটিল রোগে আক্রান্ত। হঠাৎ লকডাউনের কারণে তাদের অনেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র মজুদ করতে পারেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া দেশটিতে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার কিডনি, দেড় হাজার লিভার ও ২৫ হাজার কর্নিয়াল ট্রান্সপস্নান্ট (প্রতিস্থান) হয়। আছে হৃদপিন্ড ও ফুসফুস প্রতিস্থাপনও। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব অস্ত্রোপচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্যকর্মী ও অল ইনডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্কের সহ-আহ্বায়ক মালিনী আইসোলা বলেন, 'আমরা শিগগিরই একটি নন-কোভিড মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারি, যদি সরকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারে; বিশেষ করে গুরুতর রোগীদের, যাদের স্থায়ী চিকিৎসা বা ওষুধ দরকার।' তিনি বলেন, 'সুস্বাস্থ্য জনস্বাস্থ্য নীতিমালা অনুসারে সরকারকে বিশেষ গোষ্ঠীগুলোর চাহিদা পূরণে অধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে তারা আগে থেকেই ঝুঁকিতে রয়েছে। সেক্ষেত্রে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কঠোর নীতিমালা এবং অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তেলেঙ্গানায় বেতন কমছে সরকারি চাকুরেদের এদিকে, টানা লকডাউনের প্রভাব পড়েছে দেশটির অর্থনীতিতেও। টান পড়েছে সরকারি কোষাগারেও। এ পরিস্থিতিতে সরকারি খরচ কমানোর পথে হাঁটছে তেলেঙ্গানা। এরই ধারবাহিকতায় ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে সেখানকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তেলেঙ্গানা সরকার। তেলেঙ্গানা সরকার তার কার্যনির্বাহী, রাজনৈতিক প্রতিনিধি, সরকারের অধীনস্থ সংস্থাগুলোর কর্মচারী, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী, সরকারি কর্মচারীদের বেতন এবং অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেতন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেতন কাটছাঁটের সিদ্ধান্ত নিতে গত রোববারই এক বিশেষ বৈঠক করেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও। ওই বৈঠকের পরই সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, মুখ্যমন্ত্রী তার নিজের এবং মন্ত্রিপরিষদ ও বিধায়কদের বেতন ৭৫ শতাংশ কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার কর্মকর্তাদের বেতনও একইভাবে কমানো হবে। আইএএস, আইপিএস, আইএফএস এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় পরিষেবা কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও ৬০ শতাংশ বেতন কমিয়ে দেয়া হবে, অন্য শ্রেণির কর্মীদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বেতন কাটা হবে বলে তেলেঙ্গানা সরকার জানিয়েছে। শুধু স্থায়ী সরকারি কর্মচারীদেরই যে বেতন কমানো হচ্ছে তা নয়, চুক্তিভিত্তিক কর্মী ও অবসরকালীন ভাতা প্রাপকদেরও টাকা কমিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে চন্দ্রশেখর রাও সরকার।