করোনাভাইরাস

ভারতে সংক্রমণ তৃতীয় পর্যায়ে!

এমন কিছু রোগী পাওয়া গেছে, যারা বিদেশ থেকে আসেনি, অথবা বিদেশ থেকে সংক্রমণ নিয়ে ফিরেছে- এমন ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেনি। তবুও তাদের দেহে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটি তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের লক্ষণ ...

প্রকাশ | ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ আসলে কত ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে, তা বোঝা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা দেশটিতে সম্ভাব্য আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষার হার খুবই কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটি হয়তো এরই মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের 'তৃতীয় পর্যায়ে' (থার্ড স্টেজ) পৌঁছে গেছে বা তার খুব কাছাকাছি চলে গেছে; অর্থাৎ স্থানীয় লোকদের মাধ্যমেই অন্যরা সংক্রমিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য ভারতীয় হাসপাতালগুলোকে নিয়ে গঠিত জাতীয় টাস্কফোর্সের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ডা. গিরিধার গিয়ানি। তিনি বলেন, 'এমন কিছু রোগী পাওয়া গেছে, যারা বিদেশ থেকে আসেনি, অথবা বিদেশ থেকে সংক্রমণ নিয়ে ফিরেছে- এমন ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেনি। তবুও তাদের দেহে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এটি তৃতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের লক্ষণ।' এই অবস্থায় সংক্রমণ রুখতে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করা জরুরি। বিষয়টি বিবেচনা করেই ভারতে ২১ দিনের 'লকডাউন' জারি করা হয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার 'ডিরেক্টর জেনারেল' টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে শুধু লকডাউনই যথেষ্ট নয়, রোগীদের খুঁজে বের করা, আইসোলেশন, পরীক্ষা, চিকিৎসা করার বিষয়েও জোর দিতে হবে। গিরিধার গিয়ানি বলেন, ভারত যে এখনই তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তা পুরোপুরি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তৃতীয় পর্যায়ের একেবারে দোরগোড়ায় রয়েছে ভারত। তার এ সংশয়ের কারণ হলো, ভারতে এখন প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এক পরিসংখ্যানে প্রতীয়মান হচ্ছে, ভারতে শতাধিক পরীক্ষাগারে এখন প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজারের মতো করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরীক্ষা এত কম হওয়ার কারণেই বোঝা যাচ্ছে না, দেশটিতে সংক্রমণের প্রকৃত ব্যাপকতা ঠিক কতটা? আর উপসর্গ থাকা মানুষের নমুনা আরও ব্যাপক হারে পরীক্ষা না করলে পরিষ্কার কোনো চিত্রও পাওয়া যাবে না। ডা. গিয়ানি বলেন, 'সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটা বিষয় বোঝাতে আমি সক্ষম হয়েছি যে, তৃতীয় পর্যায় আসার জন্য অপেক্ষা না করে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। সত্যিই যদি তৃতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ পৌঁছে যায়, তখন কিন্তু আর কিছুই করার থাকবে না।' তিনি বলেন, প্রতিটি বড় বা ছোট শহরে প্রচুর আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হবে। এগুলোর অর্ধেকের সঙ্গে ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হবে। দিলিস্নতেই প্রায় হাজার তিনেক, মুম্বাইতে আড়াই হাজার এবং ব্যাঙ্গালুরুর মতো শহরে দুই হাজার আইসিইউ বেড দরকার। একইসঙ্গে নমুনা পরীক্ষার হারও বাড়াতে হবে। তার মতে, 'ব্যাপক হারে পরীক্ষা এ কারণেই করা হচ্ছে না যে, অদূর ভবিষ্যতে যদি প্রচুর সংখ্যক রোগীর পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়, তাদের জন্যও তো কিট রাখতে হবে। এখনই যদি সব কিট শেষ করে ফেলা হয়, তখন কী হবে? সেজন্যই এখন শুধু তিনটি উপসর্গ আছে; এমন লোকজনকেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে নতুন করে কিট আনা হচ্ছে।' যে কিট দিয়ে এখন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেটি অত্যন্ত দামি। প্রায় সাড়ে চার হাজার রুপি একেকটি কিটের দাম। তবে ভারতীয় গবেষণাগারগুলো তার থেকে অনেক কম দামে কিট তৈরি করার পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। হায়দরাবাদের কেন্দ্রীয় সরকারি গবেষণাগার 'সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজিতে'ও (সিসিএমবি) চলছে এমন কিট উদ্ভাবনের কাজ। সিসিএমবির পরিচালক রাকেশ মিশ্র বলেন, তাদের গবেষণাগার থেকে যে কিট তৈরি হবে, তার দাম এক হাজার রুপির মতো হতে পারে। হয়তো চার থেকে পাঁচশো রুপিতেও দাম নেমে আসতে পারে। গবেষণাগারে তৈরি করা নমুনা পরীক্ষার কিট শতভাগ নির্ভুল ফল দিচ্ছে কি না, সেটা হয়তো আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, সাউথ এশিয়ান মনিটর