বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা মহামারি

যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১ লাখ মানুষ মারা যাবে :হোয়াইট হাউস

'বিধিনিষেধ মেনে না চললে মৃতের সংখ্যা হতে পারে ১৫ লাখ থেকে ২২ লাখ' শঙ্কা সত্যি হলে ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত মার্কিনিদের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এদিকে, আক্রান্তদের জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা খালি না থাকায় নিউইয়র্কে খোলা আকাশের নিচেই তাঁবু টানিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বুধবার তোলা ছবি -রয়টার্স

প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক লাখ মানুষের মৃতু্যর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ২২ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এ ভাইরাস। তবে খোদ হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাসবিষয়ক টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ডা. ডেবোরা ব্রিক্স বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ১ লাখ মৃতু্য কিছুতেই এড়াতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, ডেইলি মেইল, আল-জাজিরা

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, 'লোকজন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করলেও যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে কমপক্ষে ১ লাখ থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত মানুষের মৃতু্য হতে পারে।'

ডা. ডেবোরা ব্রিক্সের আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নিলে তা ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত মার্কিন সেনাদের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। তবে এর চেয়েও বড় ভয়ের কথা শুনিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে না চললে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা হতে পারে ১৫ লাখ থেকে ২২ লাখ পর্যন্ত।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস মোকাবিলার উদ্যোগে একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ঠান্ডা মাথায় প্রস্তুত থাকা উচিত। তবে তার প্রত্যাশা, মৃতের সংখ্যা এত বেশি বাড়বে না।

এর আগে গত ২৯ মার্চ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে ১০ লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত এবং দুই লাখ মানুষের মৃতু্যর আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। তিনি বলেন, 'আসলে কি এতসংখ্যক লোক মারা যাবে? আমি মনে করি, না এবং আমরা যত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব তত সংখ্যা কমে আসবে। তবে বাস্তবতা স্বীকার করে আমাদের এই ভেবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত যে, আসলে এটা ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যা আমাদের নিজের চোখে দেখতে হবে।' মৃতের এই সম্ভাব্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন ফাউসি।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন অন্তত ৭৭০ জন। এখন পর্যন্ত এটাই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ড। করোনাভাইরাসকে 'বাঁচা-মরার ইসু্য' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। এটির বিস্তার ঠেকাতে সরকারের প্রচেষ্টার কথাও জানান তিনি। জনগণের প্রতি আহ্বান জানান, তার প্রশাসনের সামাজিক দূরত্বের দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলতে।

জনগণকে দুই সপ্তাহের জন্য ঘরে থাকারও পরামর্শ দেন ট্রাম্প। এ সময় তিনি আশাবাদ জানিয়ে বলেন, তার দেশ শিগগিরই বিদ্যমান বৈশ্বিক বিপর্যয়ের 'সুড়ঙ্গের শেষের আলো' প্রত্যক্ষ করবে। এর আগে গত রোববার সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা সংক্রান্ত নির্দেশনার মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

ওই নির্দেশনায় করোনার বিস্তার ঠেকাতে লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ঘরে থেকে কাজ করার মতো কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংক্রান্ত বিশদ নির্দেশনা প্রকাশ করেন তিনি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানকে তার আগের অবস্থানের বিপরীত হিসেবে উলেস্নখ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। কেননা করোনা মহামারির মধ্যেই গত সপ্তাহে তিনি ইস্টার সানডের প্রস্তুরি জন্য যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছেন। আগামী ১২ এপ্রিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান এ ধর্মীয় উৎসব পালিত হওয়ার কথা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য ও স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে লোকজনের অবাধ চলাচল ও জমায়েতের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিউইয়র্ক। সেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। তবে ইলিনয়, লুজিয়ানা, মিশিগান ও ফ্লোরিডাসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই বিভিন্ন স্থানে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের জন্য আরেকটি সংকটময় দিন অতিবাহিত হওয়ার পরই মঙ্গলবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেন ট্রাম্প। এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এরই মধ্যে মার্কিন অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ।

মার্কিন স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তালিকাভুক্ত ৩০টি বড় কোম্পানির গড় সূচক কমেছে ৪০০ পয়েন্টেরও বেশি। অর্থাৎ, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সূচক কমেছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। গত ১৩৫ বছরের মধ্যে এতটা খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94924 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1