করোনার বিস্তার

বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছাড়াল

২০৩ দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্ত সাড়ে ৮ লাখেরও বেশি অত্যন্ত বেদনাদায়ক দুই সপ্তাহ আসছে :ট্রাম্প চিকিৎসা সরঞ্জাম, মাস্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রুশ বিমান

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যত দিন যাচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর মিছিল তত লম্বা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বুধবার রাত ৮ টা পর্যন্ত করোনা কেড়ে নিয়েছে ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ। ২০৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৩ জন। এদিকে, করোনাভাইরাসে মৃতু্যর মিছিল বেড়েই চলছে যুক্তরাষ্ট্রে। মৃতের সংখ্যায় করোনার উৎপত্তিস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪ হাজার ৫৯ জন। চীনে মারা গেছেন ৩ হাজার ৩১২ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত দেশটির ৫০টি অঙ্গরাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মৃতু্য হয়েছে নিউইয়র্কে। সেখানে এ পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। নিউজার্সিতে মারা গেছে ২৬৭ জন, ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৪৯ জন, মিশিগানে ১৮৪ জন, ওয়াশিংটনে ২১০ জন, লুসিয়ানায় ২৩৯ জন ও জর্জিয়ায় ১০৮ জন। ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ হতে পারে এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সেক্ষেত্রে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ বাড়বে। মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটরেরও সংকট দেখা দিতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি উপদ্রম্নত নিউইয়র্কে এরইমধ্যে ভেন্টিলেটরের সংকট দেখা দিয়েছে। অত্যন্ত বেদনাদায়ক দুই সপ্তাহ আসছে : ট্রাম্প এদিকে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত বেদনাদায়ক দুই সপ্তাহ আসছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ভাষায়, 'আসন্ন দুইটি সপ্তাহ হতে যাচ্ছে খুব, খুবই বেদনাদায়ক।' মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আসন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে করোনাভাইরাস মহামারিকে তিনি একটি পেস্নগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এমন সময়ে তিনি এ মন্তব্য করলেন যখন যুক্তরাষ্ট্রে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় এ ভাইরাসে ৮৬৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প এখন আর কোনও 'সুগার কোটেড' বা তিক্ত কথায় মিষ্টির প্রলেপ দিতে চাইছেন না বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ফলে তিনি ইস্টারের উৎসবের এই মৌসুমে কোনও মিরাকলের কথা বলছেন না, যার মাধ্যমে কোনও এক ঐশী ক্ষমতাবলে ভালো হয়ে যাবে করোনা মহামারি আর ব্যবসা বাণিজ্যও খুলে দেওয়া যাবে। সব দায় নিউইয়র্ক গভর্নরের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ট্রাম্প গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারিও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এক ব্রিফিংয়ে এই রোগকে পাত্তা দেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন করোনাকে এক প্রকার তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, এটা একটা ফ্লুর মতো। শিগগির আমরা এ ফ্লু'র টিকা নিয়ে আসব। কিন্তু দিনে দিনে ট্রাম্পের সেই সুর পাল্টে গেছে। নিউইয়র্ক রাজ্যে করোনার কারণে বিপর্যয় দেখা দেয়ায় এখন সব দোষ গভর্নরের ঘাড়েই চাপাচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি বলছেন, দেরিতে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে এমন অবস্থায় পড়তে হয়েছে নিউইয়র্ককে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বলেন, 'যেকোনো কারণেই হোক, নিউইয়র্ক দেরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। দেরিতে পদক্ষেপ নেওয়ার ফল এখন দেখতে হচ্ছে আমাদের।' পার্শ্ববর্তী রাজ্য নিউজার্সিও করোনা মোকাবিলার পদক্ষেপ দেরিতে নিয়েছে অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট বলেন, 'নিউজার্সিও দেরিতে শুরু করেছে। দুই গভর্নরই দারুণ কাজ করছেন। কিন্তু তারা খুব দেরিতে শুরু করেছেন।' তবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। চীনের পর গত কয়েক সপ্তাহে ইতালি-স্পেনে করোনাভাইরাস লাশের মিছিল ফেললেও এখন মহাবিপদের কিনারে যুক্তরাষ্ট্রই। এখন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী এই দেশটিতেই। চিকিৎসা সরঞ্জাম, মাস্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রুশ বিমান অন্যদিকে, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে দেশটির জন্য মাস্ক ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়েছে রাশিয়া। বুধবার মস্কোর কাছে একটি বিমানঘাঁটি থেকে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম ও মাস্ক নিয়ে রাশিয়ার একটি সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্রের পথে রওনা দেয়। দুইদিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের সূত্রে মস্কো এ সাহায্য পাঠাল। সোমবারের কথোপকথনে দুই নেতা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি কি হতে পারে, তা নিয়েও আলাপ করেছেন বলে ক্রেমলিন জানিয়েছিল।