ওয়াশিংটন-তেহরান দ্বন্দ্ব

মৃতু্যর মিছিলেও কথার লড়াই

নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ খোয়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : রুহানি প্রথমবারের মতো ইরানকে সাহায্যের বার্তা ট্রাম্পের

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসান রুহানি
দুই দেশই এখন করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে আবারও কথার লড়াইয়ে নেমেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। গত ছয় মাসে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও স্থাপনায় বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। হামলাগুলোর জন্য ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীকে দায়ী করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক হামলার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে দায়ী করায় দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে এ কথার লড়াই। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, রয়টার্স, এএফপি, এপি হামলার সঙ্গে ইরানের পরোক্ষভাবেও জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান। তারপর ইরাকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ানো হচ্ছে। এর পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছিল ইরান। তারপরই ট্রাম্প ইরাকে মার্কিন সেনাঘাঁটি বা কোনো স্থাপনার ওপর ইরান বা তাদের কোনো 'প্রক্সি' হামলা চালানোর পরিকল্পনা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি হামলা হলে ইরানকে চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি। টুইটারে এরই জবাব দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, 'বিশ্বের এক নম্বর যুদ্ধবাজের কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। ইরান কখনো যুদ্ধ শুরু করে না, কেউ তা করলে শুধু তাকে শিক্ষা দিয়ে দেয়।' উলেস্নখ্য, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, ইরানে মারা গেছে তিন হাজারেরও বেশি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ খোয়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র :রুহানি এদিকে, করোনাভাইরাসের এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঐতিহাসিক সুযোগ যুক্তরাষ্ট্র হাতছাড়া করছে বলে বৃহস্পতিবার ট্রাম্পকে ইঙ্গিত করে বলেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নিজস্ব প্রচেষ্টায় এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে ইরান। মন্ত্রিপরিষদে দেওয়া ওই ভাষণে রুহানি বলেন, 'ইরানের কাছে ক্ষমা চেয়ে অবৈধ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ হেলায় হারালো যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা আমাদের করোনাবিরোধী যুদ্ধে সামান্য ব্যাঘাতও সৃষ্টি করতে পারেনি।' অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহাম্মাদ জাভেদ জারিফ মার্কিন প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে বলেন, 'করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করুন, আমাদের সঙ্গে নয়।' ইরানকে সাহায্যের বার্তা ট্রাম্পের অন্যদিকে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরান সাহায্য চাইলে যুক্তরাষ্ট্র তা দিতে প্রস্তুত বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ইরানেও ভাইরাস প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে আমরা তা দিতে প্রস্তুত।' যদিও এই মুহূর্তে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খোদ যুক্তরাষ্ট্রই। চীন থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। ইউরোপে প্রথম আক্রান্ত হয়েছিল ইতালি, মধ্যপ্রাচ্যে ইরান। তখন থেকেই কয়েকটি দেশ একাধিকবার দাবি তুলেছে, ইরানের ওপর থেকে আপাতত নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের। ইরানের জনসাধারণও এই দাবি তুলেছে। করোনায় বিধ্বস্ত ইরানও সরকারিভাবে বেশ কয়েকবার জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে তারা ঠিকমতো লড়াই করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের কাছে নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি তুলেছিল মার্কিন কংগ্রেসও। কিন্তু লাভ হয়নি। ট্রাম্প কারও কথায় কান দেননি। করোনা নিয়ে একাধিক বিষয়ে কথা বললেও ইরানের প্রসঙ্গে এতদিন মুখ খোলেননি ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার প্রথম তিনি জানান, প্রয়োজনে করোনা মোকাবিলায় ইরানকে সাহায্য করা হবে। বিশ্ব রাজনীতিতে যা এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলেই মনে করছেন কূটনীতিবিদরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। এদিকে, দেশটির পার্লামেন্টও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন প্রস্তাব নিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, করোনার সঙ্গে যুদ্ধে গোটা বিশ্বের সহযোগিতা প্রয়োজন। একসঙ্গে লড়াই করতে হবে। আগেই পৃথিবীর বেশ কিছু দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষক করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য একটি মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।