তিন মিনিট নীরবতা

শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চীনজুড়ে করোনায় মৃতদের স্মরণ

শি জিনপিংসহ দেশটির শীর্ষ নেতারা মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রিয়জনদের সমাধি অজানা উহানবাসীর দুঃখ

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা
জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে এবং দেশজুড়ে সব ধরনের বিনোদনমূলক কার্যক্রম বাতিল করে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃত কয়েক হাজার 'শহিদ'কে স্মরণে করেছে চীন। শোকের এ দিনের সঙ্গে মিলে গেছে তাদের বার্ষিক 'কিংমিং টম্ব-সুইপিং ডে'র শুরুও। প্রতিবছর এই সময়ে লাখ লাখ চীনা পরিবার বিভিন্ন কবরস্থানে গিয়ে তাদের পূর্বসূরিদের স্মরণ করে। সংবাদসূত্র :রয়টার্স, সিনহুয়া ডিসেম্বরের শেষে উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস চীনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। তাদের স্মরণে শনিবার বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় চীনজুড়ে তিন মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় গাড়ি, ট্রেন ও জাহাজ থেকে বাজানো হয় হর্ন, শোনা যায় সাইরেনের শব্দ। বেইজিংয়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্র ঝোংনানহাইয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনের শীর্ষ নেতারা জাতীয় পতাকার সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে মৃতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা জানান, শোকের স্মারক হিসেবে সে সময় তাদের বুকে পিন দিয়ে আটকানো ছিল সাদা ফুল। ফুলেল শ্রদ্ধা আর নীরবতায় দেশটির অন্যত্রও এদিন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারির যোদ্ধাদেরসহ কোভিড-১৯ এ মৃতদের স্মরণ করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা অধু্যষিত উহানের সব এলাকার ট্রাফিক সিগন্যালে তিন মিনিট লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখা হয়; এ সময় সড়কগুলোতে থাকা সব গাড়িও থমকে থাকে। হুবেই প্রদেশের এ শহরেই দুই হাজার ৫৬৭ জন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, যা চীনের মোট মৃতু্যর তিন-চতুর্থাংশের বেশি। এদের মধ্যে তরুণ চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংও আছেন, যিনি প্রথম সহকর্মীদের নতুন একটি ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। তার সতর্কবার্তায় প্রশাসন প্রথম দিকে গা করেনি; উল্টো 'গুজব রটনাকারী' অ্যাখ্যা দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেই ভাইরাস এরপর চীনের গন্ডি পেরিয়ে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গেছে ১১ লাখ, মৃতু্য ৬১ হাজারের বেশি। আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে টপকে গেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি। করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণ করতে উহানে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব কবরস্থানে 'টম্ব-সুইপিং ডে'র জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চীনা ক্যালেন্ডারে এ সময় লাখ লাখ মানুষ এসব কবরস্থানে ছুটে আসে, ফুল দিয়ে স্মরণ করে নিজেদের পূর্বসূরিদের। লকডাউনের কারণে শহরটির ঘরবন্দি বাসিন্দাদের অনেককে ফুটপাত ও বাড়ির আশপাশে ঐতিহ্যবাহী জস কাগজ পোড়াতে দেখা গেছে। এর মাধ্যমে মৃতদের কাছে সম্পদ ও অর্থ পাঠানো যায় বলে বিশ্বাস চীনাদের। প্রিয়জনদের সমাধি অজানা উহানবাসীর দুঃখ 'টম্ব সুইপিং ডে- অর্থাৎ 'সমাধি পরিষ্কার করার দিন।' বিশ্বজুড়ে অনেক দেশই এই দিনে প্রিয়জনদের সমাধিতে গিয়ে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তাদের উত্তরসূরিরা। পরে সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িতদের উদ্দেশে খাবার, ওয়াইন ও পেপার টাকা রেখে আসে তারা। এভাবে দিনটিতে গত হওয়া প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পায় উত্তরসূরিরা। চীনারা তাদের ভাষায় এই দিনটিকে বলে 'উইংমিং ফেস্টিভাল'। শনিবার বিশ্বের একাধিক দেশে পালিত হয়েছে বিশেষ এই দিনটি। তবে দিনটি বিশেষ হলেও মনে মোটেও আনন্দ নেই চীনের উহানবাসীর। এদের মধ্যে অনেককেই সমাধি করার সুযোগ পাননি চীনারা। তবে এসব চীনাদের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগা উহানবাসী। তাদেরই একজন গাও ইনজেই। উহানের এই আইটি কর্মকর্তা ৭ ফেব্রম্নয়ারি দাদা গাও শিঝুকে হারান করোনায়। ৭৬ বছরের এই বৃদ্ধ বাড়িতেই মারা যান এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করার লোকজন এসে তার মরদেহ নিয়ে যায়। গাও বলেন, 'আজকের এই দিনে আমরা আসলেই জানি না, তার মরদেহ কোথায় পোড়ানো হয়েছে এবং ছাই কোথায় সমাধিস্থ করা হয়েছে।' 'টম্ব-সুইপিং ডে'কে কেন্দ্র করে দুই সপ্তাহ আগে করোনায় মৃতদের দেহাবশেষ (ছাই) নেওয়ার সুযোগ পায় আত্মীয়রা। চীন সরকার এ সুযোগ করে দেয়। তবে এজন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় উহানবাসীর। চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুধু বেইজিং ও শেনঝেনবাসী তাদের আত্মীয়দের সমাধিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তবে এজন্য তাদের কঠোর শর্ত অনুসরণ করতে হবে। তবে উহান মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মে মাস পর্যন্ত শুধু সমাধি নয়, কোনো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না উহানবাসী।