সাফল্যের নজির

করোনা তান্ডব :চীনে প্রথম 'মৃতু্যহীন' একটি দিন

রুশ সীমান্ত দিয়ে মহামারি ফেরার শঙ্কায় চীন আরেকটি মহামন্দার জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্কবার্তা চীনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রকাশ | ০৮ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাস্তা-স্টেশনে লোক সমাগম বাড়ছে
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে প্রথমবারের মতো এ সংক্রমণে কোনো মৃতু্য ছাড়াই একটি দিন পার করার কথা জানিয়েছে চীন। সোমবার দেশটির মূল ভূখন্ডে করোনায় কারও মৃতু্য হয়নি এবং স্থানীয়ভাবে কেউ আক্রান্তও হয়নি বলে দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, সাউথ চায়না মর্নি পোস্ট, সিএনবিসি এদিন দেশটিতে নতুন করে ৩২ জনের আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে, কিন্তু তারা সবাই বিদেশফেরত বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। জানুয়ারির শেষের দিকে 'এনএইচসি' দৈনিক হালনাগাদ তথ্য দেওয়া শুরু করার পর থেকে এই প্রথম চীন করোনাভাইরাসে নতুন করে কারও মৃতু্য হয়নি বলে জানাল। এনএইচসির তথ্যানুযায়ী, প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সোমবার পর্যন্ত চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৭৪০ জন ও মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩৩১ জন। এদিন পর্যন্ত ৭৭ হাজার ১৬৭ জন সুস্থ হয়েছে এবং তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারের' তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮২ হাজার ৬৯৭ জন, মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৩৩৫ জন এবং সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৩৯৩ জন। চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই নতুন ধরনের করোনাভাইরাসটি প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছিল। এখন বিশ্বজুড়ে মহামারি হয়ে ওঠা ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে চীন উহান, হুবেই প্রদেশ ও দেশের অন্যান্য অনেক এলাকা লকডাউন করে দিয়ে চলাচল সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিল। তিন মাস এই অবরুদ্ধ দশা বজায় থাকার পর সম্প্রতি প্রাদুর্ভাবের হুমকি কমে আসায় হুবেইসহ কয়েকটি অঞ্চল থেকে লকডাউন তুলে নিয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু করেছে। উচ্চমাত্রার সংক্রামক করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান শহর থেকেও আজ (বুধবার) লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা রয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যদিয়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীন উলেস্নখযোগ্য সাফল্যের নজির রাখল। বুধবার থেকে মোবাইল ফোনে সবুজ কিউআর কোডধারী বাসিন্দারা উহান ও হুবেই থেকে অন্য যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অনুমতি পাবে। প্রাদেশিক সরকারের বিতরণ করা এই কোড বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সংকেত বহন করে। রুশ সীমান্ত দিয়ে মহামারি ফেরার শঙ্কায় চীন তবে কয়েকদিন ধরে দেশটিতে আবারও বাড়তে শুরু করেছে এর সংক্রমণ। সেক্ষেত্রে নতুন রোগীদের সিংহভাগই বহিরাগত; বিশেষভাবে বললে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাশিয়া সীমান্ত দিয়েই ঢুকছে করোনাভাইরাস। চীনের সর্ব উত্তরের প্রদেশ হেইলংজিয়াংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার বিশাল স্থল সীমান্ত রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে এ সীমান্ত দিয়ে নিয়মিতই বহু মানুষ যাতায়াত করে। এ ছাড়া কিছুদিন আগে রাশিয়া সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়ায় এই সীমান্তটাই হয়ে উঠেছে যাতায়াতের প্রধান রুট। হেইলংজিয়াংয়ের স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্যমতে, গত একমাসে এ প্রদেশে অন্তত ৬০ জন বহিরাগত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবাই রাশিয়ার ভস্নাদিভস্তোক শহর থেকে গাড়িতে চড়ে ফিরেছে। এর আগে তারা ছিল মস্কোয়, যেখানে প্রায় তিন হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। বহিরাগত ৫৯ রোগীই চীনা নাগরিক। সারাবিশ্বের মতো রাশিয়াতেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে অনেক কম হলেও গত কয়েকদিনে দেশটিতে দ্রম্নত বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। রাশিয়ায় এ পর্যন্ত ৪৭ জন করোনায় মারা গেছে। সোমবার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯৫৪ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৩৪৩ জন। দ্বিতীয় মহামন্দার জন্য বিশ্বকে প্রস্তুত থাকতে বলল চীন এদিকে, সম্ভাবনা কম তারপরও বিশ্বকে আরেকটি দ্বিতীয় মহামন্দার জন্য প্রস্তুত থাকতে সতর্ক করেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'পিপলস ব্যাংক অব চায়না'। তারা বলছে, ঝুঁকির আশঙ্কা কম, তবে বিশ্বকে অবশ্যই সবচেয়ে খারাপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধান ঝু জিন স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পরিস্থিতি এ রকম নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে গেলে এবং আর্থিক ঝুঁকির জন্য প্রকৃত অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হলে এই ঝুঁকি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।