করোনার ভয়াল থাবা

বিশ্বে মৃতু্য ৮৪ হাজার ছাড়াল আক্রান্ত প্রায় ১৫ লাখ

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে মৃতু্যর নতুন রেকর্ড স্পেনে মৃতু্যঝড়, একদিনে প্রাণ গেল ৭৫৭ জনের ফ্রান্সে মৃতু্য ১০ হাজার

প্রকাশ | ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৮৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, করোনা মহামারি বিশ্বের ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৪ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে মৃতু্য হয়েছে ৮৪ হাজার মানুষের। এ ছাড়া চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। এদিকে, করোনাভাইরাসের মহামারি এখনো সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছায়নি বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সিরিয়া, লিবিয়া ও ইয়েমেনের মতো সংঘাতকবলিত দেশগুলোতে সংক্রমণ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। গুতেরেস বলেন, 'ভাইরাসটি দেখিয়ে দিয়েছে কত দ্রম্নত তা সীমান্ত পার হতে পারে, দেশ বিধ্বস্ত করে দিয়ে জীবন কেড়ে নিতে পারে।' করোনা মহামারি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে আরও বেশি সহায়তা দিতে উন্নত দেশ এবং বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন গুতেরেস। যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে মৃতু্যর নতুন রেকর্ড এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে এক দিনে মৃতু্যর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার এক দিনেই দেশটিতে এ ভাইরাসে এক হাজার ৮৫৮ জনের মৃতু্য হয়েছে। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিউইয়র্কে। সেখানেও একদিনে মৃতু্যর নতুন রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮০৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। অন্যদিকে, কারাগারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বন্দির মৃতু্যর ঘটনায় নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সোমবার পর্যন্ত নিউইয়র্কের কারাগারে থাকা ২৮৬ বন্দি ও ৩৩১ কারা কর্মকর্তা ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মাইকেল টাইসন নামের এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে নিউইয়র্ক। রাজ্যটিতে টানা দুই দিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিম্নগামী হওয়ার পর মঙ্গলবার ফের সর্বোচ্চ মৃতু্যর রেকর্ড তৈরি হলো। তবে গভর্নর জানিয়েছেন, টানা তিন দিন গড় আক্রান্তের সংখ্যা কমছে। ফ্রান্সে মৃতু্য ১০ হাজার ছাড়াল অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারিতে এবার ফ্রান্সেও মৃতু্য ১০ হাজার ছাড়াল। বুধবার দেওয়া পরিসংখ্যানে ফ্রান্সে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৩২৮ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেখা গেছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটির হাসপাতালগুলোতে ৬০৭ জনের মৃতু্য রেকর্ড করা হয়েছে। নার্সিং হোমগুলোতে আরও ৮২০ মৃতু্যর রেকর্ড করা হলেও গত কয়েক দিনে এদের মৃতু্য হয়ে থাকতে পারে আর একসঙ্গে এদের নাম তালিকায় ওঠানো হতে পারে বলে খবরে বলা হয়েছে। গত ১৫ মার্চ থেকে লকডাউনে আছে ফ্রান্স। লকডাউন বিধি লঙ্ঘন করলে জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার প্যারিসের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাইরে বের হয়ে ব্যায়াম করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে তারা। স্পেনে আবারও মৃতু্যঝড় প্রাণ গেল ৭৫৭ জনের এ ছাড়া বেশ কয়েকদিন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর স্পেনে আবারও বাড়তে শুরু করেছে মৃতু্যহার। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ গেছে আরও ৭৫৭ জনের। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়দিন মৃতু্যর পাহাড় দেখল দেশটি। স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বুধবার দেশটিতে দৈনিক মৃতু্যহার বৃদ্ধি সামান্য কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর আগের দিন সেখানে মৃতু্যর হার বেড়েছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। স্পেনে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ১৪ হাজার ৫৫৫ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৪৮ হাজার ২১ জন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটিতে করোনা আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হতে পারে। কারণ গুরুতর অসুস্থ ছাড়া বাকিদের করোনা টেস্ট করছে না দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে এরইমধ্যে তালিকার দুইয়ে উঠে এসেছে ইউরোপের এই দেশটি। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন জারি করা হয়েছে গোটা দেশে। খাবার ও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য কেনা ছাড়া কাউকেই বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।