বিশ্বে করোনার বিস্তার

আক্রান্ত ৪০ লাখের চৌকাঠ পেরোল

মৃতু্যর মিছিলে দুই লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ রাশিয়ায় দুই লাখ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা

প্রকাশ | ১১ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সমরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। আর হাজারও আক্রান্তের জীবন বাঁচাতে গিয়ে অনেকেই এরই মধ্যে মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়েছেন। যার বিনিময়ে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়াচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এছাড়া মানুষের নির্ভেজাল ভালোবাসাও পাচ্ছেন তারা। শনিবার নিউইয়র্কের সড়কে আবেগাপস্নুত হয়ে এক নার্সকে জড়িয়ে ধরেন এক মার্কিনি। পাশে অন্যরা দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে উৎসাহ দেন -সিনহুয়া
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখের চৌকাঠ পেরিয়েছে। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৮১ হাজারের বেশি। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটারের' তথ্যমতে, শনাক্ত রোগীদের এক-চতুর্থাংশ এবং মৃতু্যর ঘটনার এক-তৃতীয়াংশই যুক্তরাষ্ট্রের। দুই দিক দিয়েই যুক্তরাষ্ট্র আছে তালিকার শীর্ষে। এছাড়া অনেক দেশে পরীক্ষার হার কম হওয়ায় এই পরিসংখ্যানেও বাস্তব চিত্র উঠে আসেনি এবং আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। সংবাদসূত্র :বিবিসি, রয়টার্স স্পেনসহ কয়েকটি দেশে দৈনিক মৃতের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করায় এসব দেশে প্রাদুর্ভাবের 'দ্বিতীয় ঢেউ' শুরু হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। আর মহামারির কারণে বিশ্ববাজার ও সাপস্নাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকানোর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। মহামারি একটি 'বড় পরীক্ষা' ছিল, আর তা দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে জানিয়েছেন চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের পরিচালক লি বিন। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় চীনের প্রাথমিক পদক্ষেপগুলো নিয়ে বিদেশিদের সমালোচনার মধ্যেই দেশটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমন কথা জানালেন। লকডাউনের বিধিনিষেধ থেকে বেরিয়ে আসার সময় যুক্তরাজ্য সরকার 'অত্যন্ত সাবধানতার' সঙ্গে এগোবে বলে দেশটির পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছেন। উত্তর কোরিয়ার প্রতি করোনাভাইরাসের হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশটিকে সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মার্কিন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের 'সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন'র (সিডিসি) পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড কোনো একজন করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার পর থেকে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছেন। এক সময় বিশ্ব মহামারির উপকেন্দ্র হয়ে ওঠা ইতালিতে চলতি সপ্তাহে লকডাউনের কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়েছে। ইতালীয়রা এখন বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করতে ও তাদের নিজ অঞ্চলে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবে। ফ্রান্সে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ এ ৮০ জনের মৃতু্য হয়েছে। এটি এক মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে দেশটিতে রেকর্ড হওয়া সর্বনিম্ন দৈনিক মৃতু্য। সোমবার থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশী স্পেনও একই পথে হাঁটছে। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)। উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৭ জন। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, 'বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনো মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।' এছাড়া করোনা মহামারির ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে আফ্রিকাসহ বেশ কিছু স্বল্পোন্নত দেশ। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭-০৮ সালের দিকে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে যে ধরনের সহিংস পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বিশ্ব চাইলে আসন্ন এ সংকট ঠেকাতে পারে, তবে তা করার সময় ফুরিয়ে আসছে। রাশিয়ায় দুই লাখ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা এদিকে, বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখের কোটা পেরিয়ে গেল রাশিয়ায়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালি ও যুক্তরাজ্যে দুই লাখের বেশি মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। রোববার রাশিয়ার করোনাভাইরাস টাস্কফোর্স জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ১১ হাজার ১২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯ হাজার ৬৮৮ জন। রাশিয়ায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে মোট এক হাজার ৯১৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৮৮ জন। রাশিয়ায় এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছে ৩৪ হাজার ৩০৬ জন। এখনো চিকিৎসাধীন এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৬৭ জন। এদের মধ্যে দুই হাজার ৩০০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।