হযবরল পরিস্থিতি

হোয়াইট হাউসে মাস্ক, কোণঠাসা ট্রাম্প

বিপদ বাড়লেও মাস্ক পরবেন না বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, সংবাদ সম্মেলন ছাড়লেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হোয়াইট হাউসে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে সোমবার থেকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ বাড়ালেও নিজের ঘর সামলাতে না পেরে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউসে একের পর এক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার ফলে বাধ্য হয়ে তাকে একাধিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে এমন হযবরল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি সতর্কতা হিসেবে প্রতিদিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ ট্রাম্প নিজে কিছুতেই মাস্ক পরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। করোনা সংকটকে লঘু করে দেখিয়ে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য আবার চালু করার উদ্যোগের সঙ্গে সেই 'ভাবমূর্তি' একেবারেই খাপ খাচ্ছে না। সেই 'ভাবমূর্তি' ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে উঠছে। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও শীর্ষ চিকিৎসা কর্মকর্তাদের আর দেখা যাচ্ছে না। হোয়াইট হাউসে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে তারা সবাই নিজেদের আপাতত বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ রাখতে সবাই তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। পেন্সের সঙ্গে ট্রাম্প শুধু টেলিফোনে কথা বলছেন। ট্রাম্পের জামাই ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারও মাস্ক পরে থাকছেন। খোদ হোয়াইট হাউসে যখন এমন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, তখন গোটা যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বদলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ট্রাম্পের চাপ অত্যন্ত দৃষ্টিকটূ হয়ে উঠছে। এদিকে, ট্রাম্প প্রায় দুই মাস ধরে গোটা দেশকে আশ্বাস দিয়ে চলেছেন, সবার জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ বাস্তবে এমন পরীক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত। রাজ্যের গভর্নররা ফেডারেল সরকারের উদ্দেশে আরও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের জরুরি আবেদন করে চলেছেন। তাদের মতে, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া আবার সবকিছু চালু করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়, সংবাদ সম্মেলন ছাড়লেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প এদিকে, করোনাভাইরাস নিয়ে প্রশ্নের জেরে এক সাংবাদিকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে আরও এক সাংবাদিকের সঙ্গে বাদানুবাদের পর আকস্মিকভাবে সোমবারের ওই সংবাদ সম্মেলনস্থল ছেড়ে চলে যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ট্রাম্পের এমন কান্ডের ভিডিও। সোমবার হোয়াইট হাউসের 'রোজ গার্ডেনে' ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রায় ঘণ্টাখানেক সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রথমেই ট্রাম্প তার প্রশাসন করোনা পরীক্ষার জন্য কত ডলার দিয়েছে সেই তথ্য তুলে ধরেন। তবে এটি জানাতে গিয়ে তিনি ১১ বিলিয়নের জায়গায় ভুল করে এক বিলিয়নের কথা উলেস্নখ করেন। সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল। তবে বিপত্তি বাদে চীনা বংশোদ্ভূত 'সিবিএস নিউজ'র হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ওয়েজিয়া জিয়াং-এর প্রশ্নের জেরে। তিনি বলেন, 'আপনি বহুবার বলেছেন, অন্যান্য দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র করোনা পরীক্ষায় ভালো করছে।' সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্প বলেন, 'হ্যাঁ'। তখন ওয়েজিয়া জিয়াং বলেন, 'যেখানে ৮০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক মারা গেছে, সেখানে তিনি কেন করোনা পরীক্ষাকে একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখছেন?' উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'সম্ভবত এই প্রশ্নটি আপনার চীনকে করা উচিত। আমাকে নয়। ঠিক আছে?' এরপর ট্রাম্প প্রশ্নের জন্য পরবর্তী সংবাদিককে ডাকতে চাইলে ওয়েজিয়া জিয়াং বলেন, 'স্যার এটা বিশেষ করে আমাকে কেন বলছেন?' পাল্টা উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'আমি কাউকে নির্দিষ্ট করে বলছি না। এমন কাউকে বলছি, যে বাজে প্রশ্ন করে। আমি তোমাকে বলেছি।' জবাবে ওয়েজিয়া জিয়াং প্রতিবাদ করে বলেন, 'এটা কোনো বাজে প্রশ্ন নয়।' তখন ট্রাম্প অন্যদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিতে অন্যদিকে তাকান। জানতে চান আর কারও প্রশ্ন আছে কিনা? এ সময় তাকে বেশ ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল। এমন সময় প্রশ্ন করেন আরেক সাংবাদিক কেইটলান কলিন্স। তিনি বলেন, 'আমার দুটি প্রশ্ন আছে।' উত্তরে ট্রাম্প বলেন, 'না, অন্য কেউ।' এর এক পর্যায়ে আর কাউকে না ডেকে সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে চলে যান ক্ষুব্ধ ট্রাম্প।