করোনা মহামারি

চীনের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদও করতে পারি : ট্রাম্প

চীনা প্রেসিডেন্টকে নিয়েও প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন তুলতে ফের সশস্ত্র বিক্ষোভ

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি হতে পারে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার 'ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কে' সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলতে 'অনাগ্রহের' কথা জানিয়ে ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ভাবনায় আছে বলেও মন্তব্য করেছেন। সংবাদসূত্র : ফক্স নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনের ব্যর্থতায় তিনি অসন্তুষ্ট। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ থামাতে জানুয়ারিতে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, মহামারি তার ওপর 'পর্দা টেনে দিয়েছে' বলেও মত তার। চলতি বছরের শুরুতে চীনের সঙ্গে হওয়া ওই চুক্তিকে ট্রাম্পে এর আগে 'বড় ধরনের অর্জন' বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেন, 'এটা হতে দেওয়া উচিত হয়নি তাদের। আমি তাদের সঙ্গে একটি চমৎকার চুক্তি করেছিলাম, অথচ এখন সে রকমটা মনে হচ্ছে না আমার। কালি প্রায় শুকিয়ে গেছে, মহামারি সামনে চলে এসেছে। যে কারণে চুক্তিটি নিয়ে আগের অনুভূতি হচ্ছে না।' সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে নিয়েও প্রকাশ্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে তার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই না।' কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে চাওয়া চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা না দিতে রিপাবলিকান এক সিনেটরের প্রস্তাব নিয়েও সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের মত জানতে চাওয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমরা অনেক কিছু করতে পারি। নানা কিছু করতে পারি। আমরা এমনকি তাদের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদও করতে পারি। এবং এখনই যদি তা করি, তাহলে কী হবে বলতে পারেন? ৫০০ বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাবে।' যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে বার্ষিক প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে; ট্রাম্প অনেকদিন ধরেই এ ?বিপুল পরিমাণ অর্থকে 'লস্ট মানি' বলে অভিহিত করে আসছিলেন। ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের চীনবিরোধী অবস্থানের কড়া সমালোচনা করেছেন চীনের প্রভাবশালী ট্যাবলয়েড 'গেস্নাবাল টাইমস'র সম্পাদক হু জিজিন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, 'এই প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) একবার কোভিড-১৯ রোগীদের শরীরে জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওই কথা স্মরণ করলে তিনি যে চীনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কথা বলছেন, তা আপনাকে বিস্মিত করবে না।' ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান সমর্থকদের অনেকেই বেশ কিছুদিন ধরে চীনের বিরুদ্ধে নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে লুকোছাপার অভিযোগ করে আসছেন। ডিসেম্বরে উহানে আবির্ভাবের পর বেইজিং ভাইরাসটির সব বৈশিষ্ট্য বিশ্ববাসীকে জানায়নি বলেও দাবি করছেন তারা। অবশ্য চীন শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। সমালোচকরা বলছেন, ভাইরাস নিয়ে চীনের 'অস্বচ্ছতা' যাই থাকুক না কেন, ট্রাম্প আসলে সংক্রমণ মোকাবিলায় তার ব্যর্থতা আড়াল করতেই এখন বেইজিংয়ের বিরোধিতায় মেতেছেন। ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্ককে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুচিন বলেছেন, চীনের উচিত ছিল করোনাভাইরাস সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য দেওয়া। দেশটির বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, ট্রাম্প এখন সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। মুচিন বলেন, 'প্রেসিডেন্ট উদ্বিগ্ন। তিনি সব বিকল্প খতিয়ে দেখছেন। অবশ্যই অর্থনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের চাকরি, তাদের স্বাস্থ্যের ওপর ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। মার্কিন অর্থনীতি এবং শ্রমিকদের রক্ষায় প্রেসিডেন্ট সম্ভব সব কিছুই করবেন।' যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে ফের সশস্ত্র বিক্ষোভ এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে আবারও সশস্ত্র বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই সশস্ত্র বিক্ষোভ গত এক মাসের মধ্যে তৃতীয় আয়োজন। বিক্ষোভকারীরা ডেমোক্রেট গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের জারি করা ঘরে থাকার আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেওয়া অঙ্গরাজ্যের একটি মিশিগান। চলতি মাসের শুরুতে গভর্নর পুনরায় অর্থনীতি সচল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ আগের দিনের চেয়ে আকারে ছোট ছিল। এর আগের বিক্ষোভ পুরো যুক্তরাষ্ট্রের নজর কেড়েছিল। বিক্ষোভকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পুলিশের মুখোমুখি হয় এবং অঙ্গরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে চায়। তবে বৃহস্পতিবার রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন হাউস ও সিনেটের কোনো অধিবেশন ছিল না এবং ক্যাপিটল হিলও জনসাধারণের জন্য বন্ধ ছিল।