করোনাকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা!

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সবার মতো ইসলামপন্থি জঙ্গিরাও ভয়ে আছে। তারপরও কোথাও কোথাও তারা যেমন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, কোথাও আবার জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছে। এই গোষ্ঠীগুলো উদ্বেগ জানিয়ে নানা বার্তা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অমুসলমানদের জন্য সাজা। তারা ইসলাম অনুসারীদের অনুতপ্ত হওয়ার এবং নিজেদের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে আল-কায়েদা বলেছে, অমুসলমানরা তাদের এই কোয়ারেন্টিনের সময় ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) অবশ্য কঠোর অবস্থান ধরে রেখেছে। অনুসারীদের কোনো অনুকম্পা না দেখিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রম্নপ' বলেছে, এই সংকটের মুহূর্তে মহামারি বৈশ্বিক সহাবস্থানকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে, যে বৈশ্বিক সহাবস্থান উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র চাবিকাঠি। সংস্থাটির মতে, একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়, কোভিড-১৯ দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইএসের বিরুদ্ধে সহযোগিতার জায়গাগুলোকে দুর্বল করে দেবে। এতে এই জঙ্গিরা তাদের অভূতপূর্ব হামলার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। তবে জঙ্গিদের কোন হামলাগুলোকে করোনাভাইরাসের ওপর চাপিয়ে দেয়া যায়, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও আফ্রিকার দেশ শাদের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হামলাটি হয়েছে গত মার্চের শেষ দিকে। নাইজেরিয়া ও নাইজার সীমান্তের কাছে এ হামলায় ৯২ জন সেনা সদস্য মারা যায়। শাদের সেনাবাহিনী আফ্রিকান জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিসরের অন্তত দুজন সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মার্চে দেশটির সিনাই উপত্যকার উত্তরাংশে আইএস হামলার সংখ্যা বেড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী আরও অন্তত তিনটি হামলা ঠেকিয়েছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে অবশ্য সিরিয়া ও ইরাকে বড় হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ইরাকে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে এবং আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কেনিয়ায় ব্রিটিশ বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী মিশন থেকে সেনা সদস্যরা পরিবারসহ যুক্তরাজ্যে ফেরত আসছে। তবে ফ্রান্স দেশের বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় মিশনটি থেকে সেনা সংখ্যা কমাচ্ছে না বলে জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পশ্চিম আফ্রিকায় সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাংশের সাহেল অঞ্চলে তাদের পাঁচ হাজার ১০০ সেনা মোতায়েন আছে। আফ্রিকান সেনাবাহিনীগুলোও তাদের কার্যক্রম সীমিত করে আনছে। আইএসপন্থি বোকো হারামের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনী তাদের বড় জমায়েত ও প্রশিক্ষণসহ বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর একটি ফাঁস হওয়া চিঠিতে দেখা গেছে, করোনার বিস্তার হলে গণকবর দেয়া বা অসুস্থদের হাসপাতালে নেয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে তাদের গাড়িগুলো। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, পশ্চিম আফ্রিকায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি কম সুরক্ষিত কারাগারগুলোকেও হামলার জন্য লক্ষ্য বানানো হতে পারে। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো সরকারকে বেকায়দায় ফেলে নিজেদের দিকে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। নিরাপত্তা গবেষক লায়েথ আলখৌরি বলেন, এমনকি কোনো কোনো গোষ্ঠী 'ভাইরাসের হাত থেকে কেবল ধর্ম মানুষকে বাঁচাতে পারে'- এমন তত্ত্ব দিয়ে সব বৈজ্ঞানিক সমাধান এড়িয়ে চলার কথা বলে বরং মহামারি ছড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ভিন্নভাবেও চিন্তা করছেন অনেকে। সম্প্রতি সোমালিয়ায় আল-কায়েদা সমর্থিত আল-শাবাব গোষ্ঠীর নেতারা মার্চে পাঁচ দিনব্যাপী সভা করেন। তারা করোনাভাইরাসকে 'জরুরি সমস্যা' হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বলে গোষ্ঠীটির এক মুখপাত্র বলেছেন। তিনি বলেন, সংকটের এই মুহূর্তে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করতে দেয়া হবে কিনা, এ বিষয়ে অচিরেই সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। আফগানিস্তানে তালেবান আরও একধাপ এগিয়ে কাজ করছে। তারা তাদের যোদ্ধারা মাস্ক ও সাবান বিলি করছে- এমন ভিডিও প্রকাশ করছে। অসুস্থদের সহযোগিতায় বা এই রোগের বিস্তার ঠেকাতে যেকোনো সহযোগী সংস্থার কার্যক্রমের নিরাপত্তায় বিঘ্ন না ঘটানোর নিশ্চয়তাও দিয়েছে তারা। তালেবান মুখপাত্র জবিউলস্নাহ মুজাহিদ বলেন, 'আলস্নাহ না করুন, যদি আমাদের নিয়ন্ত্রিত কোনো এলাকায় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, তাহলে সেই জায়গায় যুদ্ধ বন্ধ করা হতে পারে।' যদিও সম্প্রতি দুটি হামলার পর আফগান সরকার তালেবানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, এপি