করোনা মহামারি

আক্রান্তে চীনকে ছাড়াল ভারত

আক্রান্ত বাড়লেও মৃত কম দুই হাজার ৭৬০ জন লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক দুর্ঘটনায় ২৪ পরিযায়ী শ্রমিক নিহত

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী তিন লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে ৮৬ হাজার ৫৯৮ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, আক্রান্ত লাফিয়ে বাড়লেও মৃতের সংখ্যা অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে দুই হাজার ৭৬০ জনের মৃতু্য হয়েছে। সংবাদসূত্র :বিবিসি, এবিপি নিউজ তবে, ওয়ার্ল্ডোমিটারের সঙ্গে দেশটির কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানের কিছুটা ফারাক রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ভারতে এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৯৪০ জনের দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে, শনিবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী নতুন করোনাভাইরাসে দুই হাজার ৭৫২ জনের মৃতু্য হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ১১তম স্থানে উঠে এলেও ভারতে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সংক্রমণের হার খানিকটা কমতে দেখা যাচ্ছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় দেওয়া লকডাউনে পর্যুদস্ত অর্থনীতি পুনরায় সচলে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার, ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানালেও কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের মেয়াদ আরও বাড়াবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই হয় উপসর্গবিহীন, নয় তো হালকা উপসর্গ থাকায় মৃতের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই দেশজুড়ে লকডাউন দিয়ে দেওয়াও এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আক্রান্তের সংখ্যায় একদিনেই যে দুটি দেশকে টপকেছে ভারত, তাদের মধ্যে চীনে শনিবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতু্য হয়েছে চার হাজার ৬৩৭ জনের। এছাড়া পেরুতে আক্রান্ত-মৃতু্যর অনুপাত অনেকটা ভারতের মতোই। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৮৪ হাজার ৪৯৫, মৃতু্য দুই হাজার ৩৯২ জনের। এদিকে, ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন দেশটিতে সংক্রমণ হার কমার লক্ষণে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'লকডাউনের আগে প্রত্যেক সাড়ে তিনদিনে আক্রান্ত দ্বিগুণ হলেও, এখন সেটি ১১ দিনে পৌঁছেছে।' তিনি আরও বলেন, 'লকডাউনের কারণে পরিস্থিতির সুস্পষ্ট উন্নতি দেখা যাচ্ছে। লকডাউনের এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত শনাক্ত, তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে শনাক্ত, আইসোলেশন ও আক্রান্ত শনাক্তে ব্যবস্থাপনার উন্নতিসহ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করা গেছে।' ভারতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশই মিলেছে মহারাষ্ট্রে। তামিলনাড়ু, গুজরাট ও দিলিস্নতেও বিপুল সংখ্যক মানুষের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। লকডাউনে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ২৪ শ্রমিক নিহত এদিকে, ভারতের উত্তরপ্রদেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের (এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া) বহনকারী দুটি ট্রাকের সংঘর্ষে ২৪ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শনিবার স্থানীয় সময় ভোরের আগে আগে লক্ষ্ণৌ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের অরাইয়া জেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, রাজস্থান ও দিলিস্ন থেকে বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ফিরতে পরিযায়ী শ্রমিকরা ওই দুটি ট্রাকে চড়েছিলেন। এর মধ্যে একটি ট্রাক পণ্যবোঝাই ছিল। বাড়ি ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা ওই পণ্যসামগ্রীর বস্তার ওপরেই বসেছিলেন। ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অরাইয়া জেলায় দুটি ট্রাকের সংঘর্ষ ঘটে। একটি ট্রাক থেকে কয়েকজন চা খেতে নেমেছিলেন। থেমে থাকা ওই ট্রাকটিতেই অপর একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। যে শ্রমিকরা বস্তার ওপর বসে ছিলেন, তারা ছিটকে পড়েন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।' দুর্ঘটনার পর অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ছবি ও ভিডিওতে আহত শ্রমিকদের সহায়তায় পুলিশ ও স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। উদ্ধার অভিযানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'অরাইয়াতে দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবগত হয়েছেন। তিনি নিহত শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। কমিশনার এবং কানপুরের আইজিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং দুর্ঘটনার কারণ সংবলিত প্রতিবেদন দ্রম্নত দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।' শুক্রবারই আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ চেষ্টায় বাড়ি ফেরার উদ্যোগ না নিতে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'সকল শ্রমিকের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, আপনারা হেঁটে কিংবা নিজেদের উদ্যোগে পরিবহণে করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা এড়িয়ে চলুন। আমাদের কর্মকর্তাদের জানান। তারা আপনাদের সহযোগিতা করবে।'