আনন্দে উৎসবে রোকেয়া হলের ফিস্ট উদযাপন

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

কাজী ফারাহ তাসফিয়া
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যেকোনো শিক্ষার্থীর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ 'হল জীবন'। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থীদের 'বাড়ি' হয়ে উঠে এই হলগুলো। সেই প্রথম বর্ষ থেকেই অচেনা-অজানা এতজন মানুষ হাসি, কান্না, আড্ডায় পাশে থাকে একে অপরের। নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু বা বান্ধবীকেও অনেকে খুঁজে পায় হল জীবনে। সেই হল জীবনের অন্তিম পর্বে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বেগম রোকেয়া হলের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা। বর্ণিল এক ক্যাম্পাস জীবন শেষ করে তারা এখন পদার্পণ করবেন চাকরি জীবনে। অনেকেই ইতোমধ্যে শুরুও করে দিয়েছেন নিজেদের চাকরি জীবন। কিন্তু তবুও যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে পুরনো সেই দিনগুলোর কথা। আর সেই ডাকে সাড়া দিতেই বাকৃবি বেগম রোকেয়া হলের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেন তাদের শিক্ষাজীবনের শেষ 'হল ফিস্ট'। তাদের এই 'হল ফিস্টের' গল্প তুলে ধরেছেন বাকৃবি শিক্ষার্থী কাজী ফারাহ তাসফিয়া। ফিস্ট মানেই আনন্দ, উৎসব, আড্ডা-গল্প, রঙ খেলা এবং অনেক ঘোরাঘুরি। প্রথম বর্ষের সব শিক্ষার্থীদের জন্য একটা অন্যতম আবেগের জায়গা এই 'হল ফিস্ট'। কিন্তু এবারের চিত্র যেন ব্যতিক্রম। স্নাতকোত্তর শেষ করা বা প্রায় শেষের পথে আসা ব্যাচটি আয়োজন করেছে তাদের হল জীবনের শেষ ফিস্টের। আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ, পুনর্মিলনী, আনন্দ-উৎসব, একটু হইচইসহ অনেক কিছুই। ঠিক যেমনটা তারা করেছিলেন প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে। ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থী এখন পাড়ি দিয়েছন বিদেশে কিংবা কেউ পদার্পণ করেছেন কর্পোরেট বা সরকারি চাকরির জগতে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। আয়োজনে থাকতে না পারলেও দীর্ঘদিনের পুরনো সহপাঠীদের জন্য পাঠিয়েছেন স্পন্সরশীপ। শেষ সময়ের এমন আয়োজন মুগ্ধ করেছে তাদের সবাইকে। ফিস্ট শুরু হয় মেহেদী উৎসব বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এর মধ্য দিয়ে। হলটির দুটি বস্নকের বিভিন্ন ফ্লোরে শিক্ষার্থীদের রুম বিদ্যমান। তাই তারা একটি ফ্লোরকে বেছে নিয়ে শুরু করেন ডেকোরেশনের কাজ। একে একে চলে মেহেদী দেওয়ার সিরিয়াল এবং ফ্রেম হাতে ছবি তোলারও। সকালেই শুরু হয় রঙ খেলা। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রঙিন হয়ে উঠে হল আঙিনা। রঙ খেলার এই আয়োজন দেখলে মনে পড়ে যাবে ররি ঠাকুরের সেই গানের কথা! 'রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার যাবার আগে তোমার আপনা রাগে, তোমার গোপন রাগে তোমার তরুণ হাসির অরুণ রাগে অশ্রম্নজলের করুণ রাগে' দুপুরের খাবারের বিরতির পর দলবেঁধে সেজেগুজে তারা বেরিয়ে পড়েন প্রকৃতিকন্যা খ্যাত বাকৃবি ভ্রমণে। নিজের ক্যাম্পাস শেষবারের মতো হল জীবনের বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরে দেখা এবং আরও কিছু স্মৃতি সংগ্রহ করাই ছিল এই ভ্রমণের মূল উদ্দেশ্য। সন্ধ্যায় আয়োজিত হয় কালচারাল প্রোগ্রাম এবংর্ যাফেল ড্র। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার আয়োজনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন। যার মধ্যে রাখা হয়েছিল হাড়িভাঙা, বিস্কুট দৌড়, বালিশ খেলা ইত্যাদি। এসব খেলাধুলার আয়োজন শিক্ষার্থীদের মনে করিয়ে দিচ্ছিল যেন সেই পুরনো প্রথম বর্ষকেই। এই আয়োজনে পিছিয়ে ছিল না খাবারের মেনুও। খিচুড়ি কিংবা কাচ্চি, অথবা চাইনিজ ফ্রাইড রাইস সবই রাখা হয়েছিল সবার সম্মতিক্রমে। বেগম রোকেয়া হলের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীদের শেষ হল ফিস্টের অনুভূতি তুলে ধরেছেন নুসাইফা আহসান, শারমিন সুলতানা কেয়া, তানজিয়া ফারহা পিউ, সাবরিন আক্তার শিলা এবং মাশশারাত মালিহা। নুসাইফা আহসান বলেছেন, 'আমাদের হলের ১৬-১৭ সেশনের ব্যাচ ফিস্ট কখনো হয়নি। এটাই আমাদের শেষ সুযোগ ছিল যেহেতু এ বছরই অধিকাংশের স্নাতকোত্তর শেষ হচ্ছে। তাই নিজেদের আবারো নতুন করে চেনা কিংবা নতুনভাবে আনন্দ উপভোগ করার জন্য এই আয়োজন করেছিল। এখানে আমরা নিজেরাই সব কাজ ভাগাভাগি করে নিয়েছিলাম। নিজেদের সময়টাকে উপভোগ করতে গিয়ে আমাদের কেবলই মনে হচ্ছিল সেই যেন প্রথম বর্ষেই আছি এখনো!' শারমিন সুলতানা কেয়া বলেন, 'অনুষ্ঠানের প্রতিটি আয়োজনই আমার অনেক ভালো লেগেছে। তবে খেলাধুলা পর্যায়ের একটি সেগমেন্ট এমন ছিল যেখানে আমরা যতজন ফিস্টে অংশগ্রহণ করেছি সবার নাম লিখতে বলা হয়েছিল মাত্র ২ মিনিটে। এছাড়াও যারা এই আয়োজনে ছিলেন এবং অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।' তানজিয়া ফারহা পিউ বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য সোনালি সময়গুলো হলকে কেন্দ্র করেই কেটে যায়। বেগম রোকেয়া হল আমার জন্য ঠিক সেরকমই এক স্বস্তির জায়গা যেখানে আনন্দ-বেদনা, চাওয়া-পাওয়ার সব সমীকরণ জড়িয়ে রয়েছে। ৮ বছরের ক্যাম্পাস জীবনের এই বিদায়লগ্নে হলে এরকম পুরো সেশন নিয়ে একটি ফিস্ট করতে পারা সত্যিই আনন্দজনক অনুভূতি, কারণ এই মানুষগুলোকে হয়তো পাব না আর বছরান্তে কিন্তু এই স্মৃতিগুলো রয়ে যাবে অমলিন আজীবন।' সাবরিন আক্তার শিলা বলেন, '৭ থেকে ৮ বছর খুব একটা কম সময় না। ক্যাম্পাসে আসার পর এতগুলো দিন আমরা একসঙ্গে কাটিয়েছি এই মানুষ গুলোর সঙ্গে। এদের সঙ্গে ভালো লাগা, খারাপ লাগা, হাসি-কান্না সব মুহূর্তই আছে। অল্প কিছু দিনের মাঝেই সবাই দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় চলে যাবে। সবাই আলাদা হয়ে যাবার আগ মুহূর্তে হলের এই ফিস্টটা খুবই দরকার ছিল নিজেদের ভিতর সম্পর্কটা আরও একটু মজবুত করার জন্য? আমাদের এই মুহূর্তগুলো সারাজীবন যেন থেকে যায়? সবার সঙ্গে সবার আত্মার সম্পর্ক টিকে থাকুক সারাজীবন।' মাশশারাত মালিহা বলেছেন, '২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দুই শতাধিক প্রথম বর্ষের ছাত্রীর পদচারণ ঘটেছিল বেগম রোকেয়া হলের আঙিনায়। প্রথম বর্ষের সেই ছোট্টটি থেকে হাজারো গল্প-আড্ডা-খুনসুটির গল্প জমতে জমতে চোখের পলকেই যেন পার হয়ে গেল আটটি বছর। হলের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাচ হিসেবে এবার বিদায় নেওয়ার পালা। যারা হলে আছি, বিদায়লগ্নে ব্যাচমেটদের মিলনমেলা স্বরূপ এমন একটা ফিস্ট সত্যিই দরকার ছিল।'